প্রশান্তির প্রতিবন্ধকতা
বিক্ষিপ্ত চিত্ত/মন!
আগের লেখা গুলোর সবই ছিলো ইট-কাঠ-পাথরের দেয়ালে আটকে থাকা আমাদের কঠিন হয়ে পরা অন্তরগুলোকে নরম করার জন্য- ওগুলোতে মূল নামাজের চেয়ে বেশী গুরত্ব দেয়া হয়েছে আল্লাহতায়ালাকে আরো ভালোভাবে জানার প্রতি, তাঁর প্রতি কি রকম অনুভূতি নিয়ে দাঁড়ানো উচিত- এসব নিয়ে, যাতে করে যখন আমরা নামাজে দাঁড়াই তখন আমরা যেনো এটা জেনে দাঁড়াই যে কোন মহান সত্তার সামনে আমরা দাঁড়িয়ে আছি| নামাজে আসার আগ মুহুর্তে অবশ্যই আগে যা শিখেছি সেগুলো মনে মনে স্মরণ করতে হবে, যাতে নামাজে আমাদের আর জড়তা না আসে, যাতে নামাজ আমাদের কাছে একটা নতুন মর্যাদা লাভ করে এবং আরও অর্থবহ হয়ে ওঠে|
এত কিছুর পরও আমাদের বেশির ভাগের নামাজেই বারবার বিঘ্ন ঘটে, মনোযোগ সরে যায় নিজের অজান্তেই| এটা ঠিক যে, আমরা আল্লাহতায়ালাকে ভালবাসি, তাঁকে ভয় পাই, তাঁর করুনা প্রত্যাশা করি কিন্তু তারপরও আমরা আমাদের মনকে শুধু নামাজের মাঝেই কেন্দ্রীভূত করতে পারিনা| উল্টাপাল্টা চিন্তা হুটহাট করে মাথার ভেতর উদয় হয়: মনে করতে চেষ্টা করি হারিয়ে যাওয়া মোবাইলটা কোথায় রেখেছিলাম, দিবাস্বপ্ন দেখত শুরু করি যে কিভাবে পৃথিবী থেকে সব সমস্যা দূর করা যায় অথবা আজ রাতে কি দিয়ে ভাত খাবো তা নিয়ে ভাবতে থাকি| আর এ সব কিছুর শুরু হয় যখন আমরা নামাজের জন্য হাত তুলে “আল্লাহ আকবার” বলে নামাজ শুরু করি ঠিক তখন থেকে| আর যখন সালাম ফেরাই তখনই সব চিন্তা হাওয়া হয়ে যায়|
হয়তো একটা জিনিসই আমাদের এসব অযাচিত চিন্তাভাবনা থেকে দুরে সরিয়ে রাখতে পারে আর তা হল: মনে প্রাণে এটা বিশ্বাস করা যে নামাজে পুরোপুরি একাগ্র না হলে সে নামাজ আমাদের কোনই কাজে আসবে না| কিন্তু আসলেই কি তাই? আমাদের মন সরে গেলে নামাজ কি ভেঙে যায়? না! নামাজ ভাঙ্গবে না, আদায় হয়ে যাবে, কিন্তু নামাজের সওয়াবের দিক থেকে এটা বিশাল পার্থক্য সৃষ্টি করবে| নবী(সা:) বলেন:
“বান্দা নামাজ আদায় করলে, সেই নামাজের এক-দশমাংশ বা এক-নবমাংশ বা এক-অষ্টমাংশ বা এক-ষষ্ঠাংশ বা এক-পঞ্চমাংশ বা এক-চতুর্থাংশ বা
এক-তৃতীয়াংশ অথবা অর্ধেক সওয়াব পেতে পারে|” [আবু দাউদ, আহমাদ]
কারণ:
ليس للمرء من صلاته إلا ماعقل منها
“বান্দা তার নামাজের শুধু মাত্র সেই অংশের সওয়াব পায়, যে টুকু অংশ সে সজ্ঞানে(বুঝে শুনে) করে|” [আবু দাউদ]
এটা দেখে আবার এ রকম মনে করা উচিত না যে, “থাক তাহলে নামাজ না পরাই ভালো” অথবা “আমার দ্বারা এরকম নামাজ কখনই হবে না”| ধরুন যে এক পথিক উত্তপ্ত মরুভুমির ভেতর হেটে যেতে যাচ্ছে, চলার এক পর্যায়ে তার একটা স্যান্ডেল ছিড়ে গেলো; তাই সে এক পায়ে স্যান্ডেল নিয়েই চলতে থাকলো| তারপর একসময় বলে উঠলো, “আমার এক পা তো মরুভুমির উত্তপ্ত বালিতে পুড়ছেই, যাকগে আরেকটা পাও পুড়িয়ে দেই|” আর তারপর সে ছেড়া স্যান্ডেল ঠিক করার চেষ্টা করা বাদ দিয়ে স্বেচ্ছায় আরেকটা স্যান্ডেল খুলে সেই পা টাও পোড়াতে লাগলো| এই ব্যক্তিকে কি বলবেন? নিশ্চিতভাবেই তাকে বোকা বা গাধা বা বলবেন মস্তিস্কবিকৃত মানুষ| এখন আমরা যদি নামাজ ঠিক করার বদলে হাল ছেড়ে দিই তাহলে আমাদের আর এই ব্যক্তির কোন পার্থক্য থাকলো কি?
একটি গোপন অস্ত্র
অবশেষে প্রথম রহস্য উন্মোচিত করা হবে এখন| এমন কঠিন কিছুই না, কিন্তু এটা খুবই তারাতারি আমাদের নামাজের ধরন পাল্টে দেবে| তার আগে একটা প্রশ্ন: বছরের কোন সময় টাতে আমাদের খুশু সবচেয়ে বেশী থাকে? খুবই সহজ উত্তর: রমজান মাসে| আর রমজানের কখন আমাদের খুশু সবচেয়ে বেশী থাকে? সম্ভবত রাতের নামাজের সময়| আর সেই নামাজের কখন সবচেয়ে বেশী মনযোগ থাকে, কখন সবচেয়ে বেশী অশ্রুপাত হয়? যখন আমরা দু’হাত তুলে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি| এই সময়টাতেই আসলে আমরা সেই গোপন অস্ত্রটি ব্যবহার করে থাকি|
কিভাবে? ঐ সময়টাতে আমরা সত্যিই আল্লাহর সাথে সরাসরি কথা বলতে থাকি, তাঁর কাছে দাবি নিয়ে চাইতে থাকি এবং তাঁর সাড়া পাবার আশা করতে থাকি| আর এই অনুভুতিটাই আমাদের মন ও অন্তরকে নামাজের ভেতরে মগ্ন করে ফেলে, আমরা নামাজের মাধূর্য অনুভব করতে থাকি|
তাহলে গোপন জিনিসটি কি? তিন বাক্যে বলা যেতে পারে:
১. আল্লাহর সাথে কথা বলা
২. আল্লাহকে তার বিভিন্ন নাম(নামের অর্থ বুঝে সেই গুনটির মূল্য বুঝে) ধরে ডাকা
৩. তাঁর কাছ থেকে পাবই এমন দাবি নিয়ে চাওয়া, কথোপকথন চালানো|
নবী(সা:) বলেন:
إذا كان أحدكم في الصلاة فإنه يناجي ربه
“নামাজের সময় বান্দা তাঁর রবের সাথে খুব আপনভাবে কথা বলে” [বুখারী, মুসলিম]
ইবনে উথায়মান বলেন যে যখন কেউ নামাজে প্রবেশ করে, তার এমন অনুভব করা উচিত যেন সে তাঁর রবের আরশের পাশে অবস্থান করছে এবং তাঁর সাথে কথা বলছে|
সমস্যা হল আমরা আমাদের নামাজে আল্লাহর সাথে যোগাযোগটাকে অনুভব করতে পারি না; আমাদের মনে হয় যে আমরা শুধু বলেই যাচ্ছি কোন উত্তরতো পাচ্ছি না, একপেশে সংলাপ বলে মনে হয়| আসলে আমরা যখন বলি “আলহামদুলিল্লাহি রব আল-আ’লামীন” আমাদের এইটা ভেতর থেকে অনুভব করতে হবে যে সত্যিই সকল প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা সারা বিশ্ব জগতের মালিক আল্লাহর| সেজদাহর সময় আমদের মনে এই অনুভূতি থাকতে হবে যে “ইয়া আল্লাহ আমাকে ফিরিয়ে দিও না, তুমি ছাড়া আমারতো কেউ নেই, আমাকে তোমার দুয়ার হতে ফিরিয়ে দিওনা|” শুধু মন্ত্র পাঠ করার মতো বারবার তাসবিহ পড়ে কোন লাভ নেই, যা বলবেন অর্থ বুঝে, বিশ্বাস করে, নিজেকে আল্লাহর কাছে সঁপে দিয়ে বলবেন| যদি এমনটা করতে পারেন তাহলে সব নামাজই রমজানের রাতের ক্রন্দনরত নামাজের মতো হবে|
আমরা যখন সেজদাহবনত থাকি, তখন আমাদের সবাই মুখস্ত করা তাসবিহ পড়ে থাকি| কিন্তু একজন অত্যন্ত পুন্যবান পূর্বসুরী এই সেজদাহবনত অবস্থার মূল্য জানতেন এবং দু’আর সাথে সাথে আল্লাহ কে বলতেন “ইয়া আল্লাহ, তোমার এই বান্দা(সে নিজেই) কি জান্নাতে না জাহান্নামে?” কতটা ঘনিষ্ঠতা খেয়াল করুন-তিনি জানতেন তিনি আল্লাহর খুব কাছে অবস্থান করছেন এবং এত মগ্নভাবে সেজদাহবনত ছিলেন যে তিনি অনুভব করছিলেন যে তিনি আল্লাহর সাথে সরাসরি কথা বলছেন|
শুধু পড়ার জন্য পড়া নয়
এই লেখা গুলো পড়া আর মাথা ঝাকানো খুব সোজা, দু’একটা জিনিস শিখলেন আর বললেন “ওহ এগুলোতো জানিই|” শুধু জেনে কোন লাভ নেই, যেটুকু জানলাম সেটুকু প্রয়োগ করা শুরু করি| চলুন সবাই মিলে একে অপরকে সাহায্য করে এই অল্প অল্প জ্ঞানগুলোকে প্রয়োগ শুরু করি:
১. এমন একজন বন্ধুকে সাথে নিন যার সাথে আপনি ইসলামের ব্যাপারে অনেক খোলামেলা| প্রত্যেক নামাজে আসার সময় একজন আরেকজনকে মনে করিয়ে দিন যে এখন আল্লাহর সাথে কথা বলতে যাচ্ছি| আল্লাহর গুনাবলী নিয়ে কথা বলুন, যেসকল কারণে তাঁর প্রতি আপনি কৃতজ্ঞ সেসব নিয়ে কথা বলুন, কথা বলুন কি কি কারণে আপনি তাঁর ক্ষমা প্রার্থনা করেন সে সব নিয়ে|
২. যখন জায়নামাজে দাঁড়িয়ে হাত তুলবেন “আল্লাহ আকবার” বলার জন্য, তা করবেন দৃঢ় প্রত্যয়ে, নিজেকে আল্লাহর কাছে পুরোপুরি সঁপে দিয়ে| মনে করবেন যেন আপনাকে এখন পৃথিবী থেকে তুলে নেয়া হচ্ছে, আপনার রুহকে তাঁর রবের কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আর এখনই আপনার সাথে আপনার রবের ঘনিষ্ঠ কথপোকথন শুরু হবে| এই জগতের আর কোন কিছুতেই আপনার আর মনোযোগ সরাতে পারবে না|
আল্লাহতায়ালা যেনো আমাদের নামাজকে নবী(সা:), তাঁর সাহাবাগণ(রা:) এবং তাদের যোগ্য উত্তরসূরীদের নামাজের মতো মাধুর্যময় করে তোলেন| আমীন|
[চলবে....(ইনশা-আল্লাহ)]
বিক্ষিপ্ত চিত্ত/মন!
আগের লেখা গুলোর সবই ছিলো ইট-কাঠ-পাথরের দেয়ালে আটকে থাকা আমাদের কঠিন হয়ে পরা অন্তরগুলোকে নরম করার জন্য- ওগুলোতে মূল নামাজের চেয়ে বেশী গুরত্ব দেয়া হয়েছে আল্লাহতায়ালাকে আরো ভালোভাবে জানার প্রতি, তাঁর প্রতি কি রকম অনুভূতি নিয়ে দাঁড়ানো উচিত- এসব নিয়ে, যাতে করে যখন আমরা নামাজে দাঁড়াই তখন আমরা যেনো এটা জেনে দাঁড়াই যে কোন মহান সত্তার সামনে আমরা দাঁড়িয়ে আছি| নামাজে আসার আগ মুহুর্তে অবশ্যই আগে যা শিখেছি সেগুলো মনে মনে স্মরণ করতে হবে, যাতে নামাজে আমাদের আর জড়তা না আসে, যাতে নামাজ আমাদের কাছে একটা নতুন মর্যাদা লাভ করে এবং আরও অর্থবহ হয়ে ওঠে|
এত কিছুর পরও আমাদের বেশির ভাগের নামাজেই বারবার বিঘ্ন ঘটে, মনোযোগ সরে যায় নিজের অজান্তেই| এটা ঠিক যে, আমরা আল্লাহতায়ালাকে ভালবাসি, তাঁকে ভয় পাই, তাঁর করুনা প্রত্যাশা করি কিন্তু তারপরও আমরা আমাদের মনকে শুধু নামাজের মাঝেই কেন্দ্রীভূত করতে পারিনা| উল্টাপাল্টা চিন্তা হুটহাট করে মাথার ভেতর উদয় হয়: মনে করতে চেষ্টা করি হারিয়ে যাওয়া মোবাইলটা কোথায় রেখেছিলাম, দিবাস্বপ্ন দেখত শুরু করি যে কিভাবে পৃথিবী থেকে সব সমস্যা দূর করা যায় অথবা আজ রাতে কি দিয়ে ভাত খাবো তা নিয়ে ভাবতে থাকি| আর এ সব কিছুর শুরু হয় যখন আমরা নামাজের জন্য হাত তুলে “আল্লাহ আকবার” বলে নামাজ শুরু করি ঠিক তখন থেকে| আর যখন সালাম ফেরাই তখনই সব চিন্তা হাওয়া হয়ে যায়|
হয়তো একটা জিনিসই আমাদের এসব অযাচিত চিন্তাভাবনা থেকে দুরে সরিয়ে রাখতে পারে আর তা হল: মনে প্রাণে এটা বিশ্বাস করা যে নামাজে পুরোপুরি একাগ্র না হলে সে নামাজ আমাদের কোনই কাজে আসবে না| কিন্তু আসলেই কি তাই? আমাদের মন সরে গেলে নামাজ কি ভেঙে যায়? না! নামাজ ভাঙ্গবে না, আদায় হয়ে যাবে, কিন্তু নামাজের সওয়াবের দিক থেকে এটা বিশাল পার্থক্য সৃষ্টি করবে| নবী(সা:) বলেন:
“বান্দা নামাজ আদায় করলে, সেই নামাজের এক-দশমাংশ বা এক-নবমাংশ বা এক-অষ্টমাংশ বা এক-ষষ্ঠাংশ বা এক-পঞ্চমাংশ বা এক-চতুর্থাংশ বা
এক-তৃতীয়াংশ অথবা অর্ধেক সওয়াব পেতে পারে|” [আবু দাউদ, আহমাদ]
কারণ:
ليس للمرء من صلاته إلا ماعقل منها
“বান্দা তার নামাজের শুধু মাত্র সেই অংশের সওয়াব পায়, যে টুকু অংশ সে সজ্ঞানে(বুঝে শুনে) করে|” [আবু দাউদ]
এটা দেখে আবার এ রকম মনে করা উচিত না যে, “থাক তাহলে নামাজ না পরাই ভালো” অথবা “আমার দ্বারা এরকম নামাজ কখনই হবে না”| ধরুন যে এক পথিক উত্তপ্ত মরুভুমির ভেতর হেটে যেতে যাচ্ছে, চলার এক পর্যায়ে তার একটা স্যান্ডেল ছিড়ে গেলো; তাই সে এক পায়ে স্যান্ডেল নিয়েই চলতে থাকলো| তারপর একসময় বলে উঠলো, “আমার এক পা তো মরুভুমির উত্তপ্ত বালিতে পুড়ছেই, যাকগে আরেকটা পাও পুড়িয়ে দেই|” আর তারপর সে ছেড়া স্যান্ডেল ঠিক করার চেষ্টা করা বাদ দিয়ে স্বেচ্ছায় আরেকটা স্যান্ডেল খুলে সেই পা টাও পোড়াতে লাগলো| এই ব্যক্তিকে কি বলবেন? নিশ্চিতভাবেই তাকে বোকা বা গাধা বা বলবেন মস্তিস্কবিকৃত মানুষ| এখন আমরা যদি নামাজ ঠিক করার বদলে হাল ছেড়ে দিই তাহলে আমাদের আর এই ব্যক্তির কোন পার্থক্য থাকলো কি?
একটি গোপন অস্ত্র
অবশেষে প্রথম রহস্য উন্মোচিত করা হবে এখন| এমন কঠিন কিছুই না, কিন্তু এটা খুবই তারাতারি আমাদের নামাজের ধরন পাল্টে দেবে| তার আগে একটা প্রশ্ন: বছরের কোন সময় টাতে আমাদের খুশু সবচেয়ে বেশী থাকে? খুবই সহজ উত্তর: রমজান মাসে| আর রমজানের কখন আমাদের খুশু সবচেয়ে বেশী থাকে? সম্ভবত রাতের নামাজের সময়| আর সেই নামাজের কখন সবচেয়ে বেশী মনযোগ থাকে, কখন সবচেয়ে বেশী অশ্রুপাত হয়? যখন আমরা দু’হাত তুলে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি| এই সময়টাতেই আসলে আমরা সেই গোপন অস্ত্রটি ব্যবহার করে থাকি|
কিভাবে? ঐ সময়টাতে আমরা সত্যিই আল্লাহর সাথে সরাসরি কথা বলতে থাকি, তাঁর কাছে দাবি নিয়ে চাইতে থাকি এবং তাঁর সাড়া পাবার আশা করতে থাকি| আর এই অনুভুতিটাই আমাদের মন ও অন্তরকে নামাজের ভেতরে মগ্ন করে ফেলে, আমরা নামাজের মাধূর্য অনুভব করতে থাকি|
তাহলে গোপন জিনিসটি কি? তিন বাক্যে বলা যেতে পারে:
১. আল্লাহর সাথে কথা বলা
২. আল্লাহকে তার বিভিন্ন নাম(নামের অর্থ বুঝে সেই গুনটির মূল্য বুঝে) ধরে ডাকা
৩. তাঁর কাছ থেকে পাবই এমন দাবি নিয়ে চাওয়া, কথোপকথন চালানো|
নবী(সা:) বলেন:
إذا كان أحدكم في الصلاة فإنه يناجي ربه
“নামাজের সময় বান্দা তাঁর রবের সাথে খুব আপনভাবে কথা বলে” [বুখারী, মুসলিম]
ইবনে উথায়মান বলেন যে যখন কেউ নামাজে প্রবেশ করে, তার এমন অনুভব করা উচিত যেন সে তাঁর রবের আরশের পাশে অবস্থান করছে এবং তাঁর সাথে কথা বলছে|
সমস্যা হল আমরা আমাদের নামাজে আল্লাহর সাথে যোগাযোগটাকে অনুভব করতে পারি না; আমাদের মনে হয় যে আমরা শুধু বলেই যাচ্ছি কোন উত্তরতো পাচ্ছি না, একপেশে সংলাপ বলে মনে হয়| আসলে আমরা যখন বলি “আলহামদুলিল্লাহি রব আল-আ’লামীন” আমাদের এইটা ভেতর থেকে অনুভব করতে হবে যে সত্যিই সকল প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা সারা বিশ্ব জগতের মালিক আল্লাহর| সেজদাহর সময় আমদের মনে এই অনুভূতি থাকতে হবে যে “ইয়া আল্লাহ আমাকে ফিরিয়ে দিও না, তুমি ছাড়া আমারতো কেউ নেই, আমাকে তোমার দুয়ার হতে ফিরিয়ে দিওনা|” শুধু মন্ত্র পাঠ করার মতো বারবার তাসবিহ পড়ে কোন লাভ নেই, যা বলবেন অর্থ বুঝে, বিশ্বাস করে, নিজেকে আল্লাহর কাছে সঁপে দিয়ে বলবেন| যদি এমনটা করতে পারেন তাহলে সব নামাজই রমজানের রাতের ক্রন্দনরত নামাজের মতো হবে|
আমরা যখন সেজদাহবনত থাকি, তখন আমাদের সবাই মুখস্ত করা তাসবিহ পড়ে থাকি| কিন্তু একজন অত্যন্ত পুন্যবান পূর্বসুরী এই সেজদাহবনত অবস্থার মূল্য জানতেন এবং দু’আর সাথে সাথে আল্লাহ কে বলতেন “ইয়া আল্লাহ, তোমার এই বান্দা(সে নিজেই) কি জান্নাতে না জাহান্নামে?” কতটা ঘনিষ্ঠতা খেয়াল করুন-তিনি জানতেন তিনি আল্লাহর খুব কাছে অবস্থান করছেন এবং এত মগ্নভাবে সেজদাহবনত ছিলেন যে তিনি অনুভব করছিলেন যে তিনি আল্লাহর সাথে সরাসরি কথা বলছেন|
শুধু পড়ার জন্য পড়া নয়
এই লেখা গুলো পড়া আর মাথা ঝাকানো খুব সোজা, দু’একটা জিনিস শিখলেন আর বললেন “ওহ এগুলোতো জানিই|” শুধু জেনে কোন লাভ নেই, যেটুকু জানলাম সেটুকু প্রয়োগ করা শুরু করি| চলুন সবাই মিলে একে অপরকে সাহায্য করে এই অল্প অল্প জ্ঞানগুলোকে প্রয়োগ শুরু করি:
১. এমন একজন বন্ধুকে সাথে নিন যার সাথে আপনি ইসলামের ব্যাপারে অনেক খোলামেলা| প্রত্যেক নামাজে আসার সময় একজন আরেকজনকে মনে করিয়ে দিন যে এখন আল্লাহর সাথে কথা বলতে যাচ্ছি| আল্লাহর গুনাবলী নিয়ে কথা বলুন, যেসকল কারণে তাঁর প্রতি আপনি কৃতজ্ঞ সেসব নিয়ে কথা বলুন, কথা বলুন কি কি কারণে আপনি তাঁর ক্ষমা প্রার্থনা করেন সে সব নিয়ে|
২. যখন জায়নামাজে দাঁড়িয়ে হাত তুলবেন “আল্লাহ আকবার” বলার জন্য, তা করবেন দৃঢ় প্রত্যয়ে, নিজেকে আল্লাহর কাছে পুরোপুরি সঁপে দিয়ে| মনে করবেন যেন আপনাকে এখন পৃথিবী থেকে তুলে নেয়া হচ্ছে, আপনার রুহকে তাঁর রবের কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আর এখনই আপনার সাথে আপনার রবের ঘনিষ্ঠ কথপোকথন শুরু হবে| এই জগতের আর কোন কিছুতেই আপনার আর মনোযোগ সরাতে পারবে না|
আল্লাহতায়ালা যেনো আমাদের নামাজকে নবী(সা:), তাঁর সাহাবাগণ(রা:) এবং তাদের যোগ্য উত্তরসূরীদের নামাজের মতো মাধুর্যময় করে তোলেন| আমীন|
[চলবে....(ইনশা-আল্লাহ)]
No comments:
Post a Comment