Dec 20, 2010

কিভাবে নামাজের মাধূর্য আস্বাদন করা যায়? পর্ব ৮

নামাজের পূর্বেই নামাজের অবস্থায়:



যখন আমরা “সালাত”এর কথা বলে থাকি, আমরা সবাই মনে করি যে এটা আসলে শুরু হয় যখন আমরা দাঁড়িয়ে হাত তুলি এবং বলি “আল্লাহ আকবার”| কিন্তু আসল ঘটনা তা নয়, এটা “আল্লাহ আকবার” বলারও আগে থেকে শুরু হয়| নবী(সা:) বলেন:



لا زال أحدكم في صلاة ما انتظر الصلاة



“একজন যতক্ষণ নামাজের জন্যে অপেক্ষায় থাকে, তার জন্যে ঐ সম্পূর্ণ সময় নামাজের মধ্যে ধরা হয়|”(বুখারী, মুসলিম)

পুরুষদের জন্যে, এটা সেই সময় থেকে শুরু হয় যখন সে নামাজের জন্য প্রস্তুত হয়ে মসজিদে জামাতের সাথে নামাজের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে| যারা মসজিদে অবস্থান করছেন না এমন মহিলাদের জন্য এই নামাজের সময় শুরু হয় যখন তিনি অজু করে নামাজের জন্য সঠিক পোশাক(যদি তাঁর দরকার হয়) পরে নামাজের সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করেন তখন থেকে|



একটি গুপ্তধন:



নামাজের একটি গুরুত্বপূর্ন দিক যেটাকে আমরা আমলেই নেই না সেটা হল আজান| আমরা কি কখনো আজানের সুমধুর সুর-মূর্ছনা অনুভব করেছি? যে আজানের মাধুর্য আস্বাদন করে তার নামাজের খুশু বৃদ্ধি পায়| প্রশ্ন আসতে পারে যে খুশুর সাথে আজানের সম্পর্ক কি?



শয়তান নামাজকে ঘৃনা করে| নবী(সা:) বলেন, “যখন আজানের শব্দ উচ্চারিত হয়, শয়তান তখন সশব্দে বায়ু ছাড়তে ছাড়তে দৌড়ে পালিয়ে যায় যাতে তার কানে আর আজানের শব্দ না আসে| আজান শেষ হলে আবার ফিরে আসে; ইকামাতের সময় আবার সে পালিয়ে যায় এবং শেষ হলে আবার ফিরে আসে, এবং মানুষের মনকে ফিসফিসিয়ে ধোঁকা দিতে থাকে(যাতে নামাজ থেকে মনোযোগ সরে যায়) এবং মানুষকে এমন সব জিনিস মনে করিয়ে দেয় যা নামাজের পূর্বে তার মাথায় ছিলনা এবং যার কারণে মানুষ ভুলে যায় যে সে কতো রাকাত নামাজ পরেছে|” [বুখারী]



আজানের সময় হতেই শয়তান মানুষের মনকে অন্যদিকে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করতে থাকে, যাতে আজানের গুনাবলী থেকে সে কোন লাভ না পায়| তাহলে আজানের কি এমন বিশেষ গুন আছে?



আজান: একটি সুযোগ



নবী(সা:) বলেন:



المؤذن يغفر له بمد صوته ويصدقه من سمعه من رطب ويابس وله مثل أجر من صلى معه



“মুয়াজ্জিন(যিনি আজান দেন)কে তার আজান যতদুর পৌঁছে এবং যে তা শুনে আজানের শব্দ গুলোর সমর্থন দেয়(আজানের উত্তর) তার জন্য মাফ করে দেয়া হয়| যারা তার সাথে নামাজ পড়বে, তাকেও তাদের সমপরিমাণ সওয়াব দেয়া হবে|”



তাহলে যদি ৫০ জন মানুষ নামাজ পড়ে, মুয়াজ্জিন ৫০ জনের সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করে| যদি ১০০ জন নামাজ পড়ে তো ১০০ জনের সওয়াব পাবে| আমাদের প্রশ্ন হল: আমরা তো মুয়াজ্জিন না, আমাদের এতে কি লাভ আছে? হ্যাঁ, লাভ আছে, আমরাও মুয়াজ্জিনের সমপরিমাণ সওয়াব পেতে পারি| আবদুল্লাহ বিন আমর(রা:) বর্ণনা করেন যে এক ব্যক্তি নবী(সা:)কে জিগ্যেস করেন “মুয়াজ্জিন কি আমাদের চেয়ে বেশী সওয়াব পান?” এবং নবী(সা:) উত্তরে বলেন:



قل كما يقولون فإذا انتهيت فسل تعطه



“মুয়াজ্জিন যা বলে তা তুমিও বল আর যখন আজান শেষ হয়, তখন দোয়া করো, তাহলে তোমাকেও সে সওয়াব দেয়া হবে|”[আবু দাউদ]



যখন আজান “আল্লাহ আকবার” বলার মাধ্যমে শুরু হয় তখন, এটা আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চেষ্টা করে যে, আপনি যাই করছেন আল্লাহতায়ালা তার চেয়ে অনেক গুরত্বপুর্ন, তা সে টিভিতে কোন সিরিয়ালই হোক, অথবা নেটে বা পেপারে পড়া কোন লেখনী হোক আর কোন কথপোকথনই হোক| আর কেন আজান দেয়ার সাথে সাথে সবকিছু ছেড়ে নামাজের প্রস্তুতি নেবেন? কারণ-“লা-ইলাহা ইলা-আল্লাহ”-আপনি এক আল্লাহই বিশ্বাস করেন| যদি আজান আপনাকে আপনি যা করছেন তা থেকে সরিয়ে নামাজমুখী করতে না পারে তার মানে হল আপনি আল্লাহর চেয়ে এই কাজকে বেশী গুরুত্বপূর্ন মনে করছেন|




আল্লাহর অনুমোদন ছাড়া কারও কোন ক্ষমতা নেই



আমরা জানি যখন আমরা আজান শুনি তখন আমাদের উচিত মুয়াজ্জিন যা বলে তা নিজে নিজে বলা| এটাই আজানের উত্তর| তবে “হায়া’আলা আস-সালাহ” (নামাজের জন্যে আসো) এবং “হায়া’আলা আল-ফালাহ” (সাফল্যের দিকে এসো) এই দুটোর উত্তরে বলতে হয় “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইলা বিল্লাহ” (আল্লাহর অনুমোদন ছাড়া কারও কোনই ক্ষমতা নেই)|



এটা কেন বলি? আসলে এটা হল আল্লাহর কাছে আমাদের অসহায় আত্মসমর্পণ যে আল্লাহ তোমার সাহায্য ছাড়া নামাজে নিবিড় ভাবে মগ্ন থাকা আমাদের পক্ষে সম্ভব না, নামাজ সঠিকভাবে আদায় করাও সম্ভব না|



একটি আহ্ববান



মনে রাখা উচিত যে আজান হল আহ্ববান; এটা হল সবচেয়ে সুন্দর আহ্ববান যা আমাদেরকে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং একমাত্র ইবাদাতের যোগ্য আল্লাহর দিকে ডাকে| যখন আমরা আমাদের অনেক ভালোবাসার কারও কাছে যাই আমাদের মাঝে আবেগ-উত্তেজনা কাজ করে, এক ধরনের আকাঙ্খা কাজ করে| আর এসবই শুরু হয় যখন অনেক ভালোবাসার সে বলে “দশ মিনিটের মাঝেই আমি তোমার সাথে দেখা করছি” বা “তুমি আসো এখনই দেখা করবো”| আমাদের মাঝে এক আজব সুখের অনুভূতি খেলা করে| আয়েশা(রা:) বর্ণনা করেন নবী(সা:) বলেছেন:



من أحب لقاء الله أحب الله لقاءه



“যে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করতে পছন্দ করে, আল্লাহও তার সাথে সাক্ষাত করতে পছন্দ করেন|” (বুখারী)



আজান আমাদের বলে যে এখন আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের সময় হয়েছে| তাই যারা আল্লাহকে ভালোবাসে তারা তারাতারি করে প্রস্তুত হয়ে দেখা করতে মসজিদে বা জায়নামাজে দাড়িয়ে পড়ে, নামাজের শেষ সময়ের জন্য অপেক্ষা করে না| মুসা(আ:) কে দেখুন কি করেছিলেন:



وَمَا أَعْجَلَكَ عَن قَوْمِكَ يَا مُوسَى قَالَ هُمْ أُولَاءِ عَلَىٰ أَثَرِي وَعَجِلْتُ إِلَيْكَ رَبِّ لِتَرْضَىٰ ٰ



“(আল্লাহ বললেন)হে মূসা, তোমার সম্প্রদায়কে পেছনে ফেলে তুমি ত্বরা করলে কেন? তিনি(মুসা(আ:)) বললেনঃ এই তো তারা আমার পেছনে আসছে এবং হে আমার পালনকর্তা, আমি তাড়াতাড়ি তোমার কাছে এলাম, যাতে তুমি সন্তুষ্ট হও|” [সুরা তাহা ২০:৮৩-৮৪]



মুসা(আ:) আল্লাহকে প্রচন্ড ভালবাসতেন, এ কারণেই তারাতারি আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের আশায় এত জোর কদমে এগিয়ে গিয়েছিলেন যে তার সম্প্রদায় তাল মেলাতে না পেরে পিছিয়ে পরেছিলো|



আজান কে উপভোগ এবং উপলব্ধি করতে থাকুন, ইনশা-আল্লাহ নামাজও উপভোগ্য হয়ে উঠবে| ইয়া আল্লাহ, আপনি আমাদের নামাজ কে নিঁখুত ও সুন্দর করে তুলুন| আমীন|

No comments:

Post a Comment