Dec 20, 2010

নিয়ত অনুসারে নিয়তি ও পরিণতি

নিয়ত অনুসারে নিয়তি ও পরিণতি
عَنْ عُمَرَ بْنِ اْلَخطَّابِ رَضيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ يَقُوْلُ: إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَ إِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى اللهِ وَ رَ سُوْلِهِ فَهِجْرَتٌهُ إِلَى اللهِ وَ رَسُوْلِهِ، وَ مَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ لِدُنْيا يُصِيْبُهَا أَوِامْرَأَةٍ يَتَزَوَّجُهَا فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ.


উমর ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি : কর্ম মাত্রই নিয়তের উপর নির্ভরশীল। এবং প্রত্যেকের প্রাপ্য-ফল হবে তাই, যা সে নিয়ত করেছে। অতএব, কারো হিজরত আল্লাহ ও রাসূলের উদ্দেশ্যে হলে বস্তুত তার হিজরত আল্লাহ ও রাসূলের উদ্দেশ্যেই গণ্য হবে। আর যার হিজরত দুনিয়া-প্রাপ্তি অথবা কোন নারীকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে হবে, তার হিজরত তারই প্রতি হয়েছে বলে গণ্য হবে।


হাদিস বর্ণনাকারী : খলিফা, আমিরুল মোমিনীন আবু হাফস উমর ইবনুল খাত্তাব ইবনে নুফায়েল ইবনে আব্দুল উজ্জা আল-কোরাইশী আল-আদাবী। তিনি জন্ম লাভ করেন নবুয়্যতের ত্রিশ বৎসর পূর্বে। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে মুসলমানদের প্রতি ছিলেন কঠোর মনোভাব পোষণকারী। অত:পর ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর ইসলাম গ্রহণের ফলে মুসলমানদের কাক্সিক্ষত বিজয় ও মুক্তির দুয়ার খুলে যায়।


আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ র. বলেন :—
وما عبدنا الله جهرة حتى أسلم عمر.


উমর ইসলাম আনার পূর্বে আমরা প্রকাশ্যে আল্লাহর এবাদত করিনি।


তিনি ছিলেন দীর্ঘকায়, বিশাল অবয়ব ও রক্তিম বর্ণের অধিকারী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ফারুক (পার্থক্যকারী) উপাধিতে ভূষিত করেন। কেননা, আল্লাহ তাআলা তার ইসলাম গ্রহণের মধ্য দিয়ে হক ও বাতিলের মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করে দিয়েছিলেন। তিনি হিজরতের পাঁচ বছর পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সমস্ত যুদ্ধেই তিনি উপস্থিত ছিলেন। ১৩ হিজরিতে আবু বকর সিদ্দিক রা.-এর মনোনয়ন ও পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁর মৃত্যুর পর খলিফা নিযুক্ত হন। তাঁর খেলাফতকালেই সিরিয়া, মিশর, বায়তুল মুকাদ্দাস ও ইরাক বিজিত হয়। হিজরি সন প্রবর্তন করেন তিনিই। নথি তৈরির রীতিও তারই মাধ্যমে চালু হয়। এমনিভাবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের প্রচলন সর্বপ্রথম তিনিই করেছেন। মুসলিম উম্মার প্রতি তার দরদ ছিল অগাধ ; ব্যক্তিগতভাবে তিনি সকলের প্রয়োজনের প্রতি সদা দৃষ্টি রাখতেন, খুঁজে খুঁজে তাদের প্রয়োজন পূরণে তৎপর থাকতেন। সত্য ও সততায় তিনি ছিলেন কঠোর। যে পথ বেয়ে চলতেন তিনি, শয়তান তা থেকে পালিয়ে ভিন্ন পথে পলায়ন করত। দীর্ঘ দশ বছর ব্যাপী তিনি মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব ও খেলাফতের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি শাহাদাত বরণ করেন ২৩ হি: সনে, তখন তাঁর বয়স ছিল ৬৩ বছর।


* শাব্দিক আলোচনা :—
إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ : এখানে আমল-এর উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের কর্ম ও কথন। বাক্যটির গঠন ও শৈলী ‘সীমাবদ্ধকরণ’ অর্থের প্রতি নির্দেশ করে। অর্থাৎ নিয়ত ব্যতীত কোন কর্মফল নেই। نية ¬-النيات এর বহুবচন ; আভিধানিক অর্থ : এরাদা, ইচ্ছা।


নিয়তের পারিভাষিক অর্থ
নিয়তের পারিভাষিক অর্থ দুটি :—
এক : কর্মের মাধ্যমে অভীষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের পার্থক্য নিরূপণ ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য প্রদান। অর্থাৎ, কর্মের উদ্দেশ্য কি লা-শরিক এক আল্লাহর সন্তুষ্টি, নাকি সরাসরি আল্লাহ ভিন্ন অপর কারো সন্তুষ্টি, অথবা আল্লাহর সাথে সাথে ভিন্ন কেউ?—এভাবে পার্থক্য নিরূপণ। উদাহরণত: সালাত আদায়। নিয়তের মাধ্যমে সহজে আমরা পার্থক্য নির্ণয় করতে সক্ষম হই যে, বান্দা তা কি একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে, তার নির্দেশ পালনার্থে, তাকে ভালোবেসে, করুণা প্রাপ্তির আশায়, তার শাস্তির ভয়ে ভীত হয়ে সালাত আদায় করেছে, না তার আদায়ের পিছনে কাজ করেছে লোক-দেখানো, বা যশ-খ্যাতি প্রাপ্তির মত হীন উদ্দেশ্য।


দুই : এবাদতের মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করা। যেমন : জোহরের সালাতকে আসরের সালাত থেকে পৃথক করা। এবং রমজান মাসের রোজাকে অন্য মাসের রোজা থেকে পৃথক করা। অথবা এবাদতকে অভ্যাসগত নিত্য-কর্ম থেকে ভিন্ন করে নেয়া। যেমন অপবিত্রতার গোসলকে পরিচ্ছন্নতা ও শীতলতা লাভের গোসল থেকে ভিন্ন করা।


امرئ অর্থ পুরুষ। তবে এখানে নারীরাও অন্তর্ভুক্ত। ইসলামি শরিয়ার প্রচলিত সম্বোধন ধারা অনুসারে অর্থাৎ ইসলামি শরিয়া কোন ক্ষেত্রে মহিলার উল্লেখ ব্যতীত শুধু পুরুষের উল্লেখ করে বিধি-নিষেধ বর্ণনা করলে, সেখানে আদৌ এ উদ্দেশ্য করা হয় না যে, বর্ণিত বিধানটি শুধু পুরুষের জন্য প্রযোজ্য, মহিলার জন্য আলাদা বিধান রয়েছে। হ্যাঁ, মহিলার জন্য আলাদা বিধান প্রমাণ করে এমন কোন দলিল যদি থাকে, তাহলে তা স্বতন্ত্র। তা উক্ত সম্বোধন ধারার আওতাভুক্ত নয়।


الهجر- هِجْرَتُهُ থেকে গৃহীত। শব্দটির আদি অর্থ—ত্যাগ বা বর্জন ; এর বিপরীত শব্দ মিলন বা সংযোগ। পরবর্তীতে এর ব্যবহার প্রাধান্য পেতে থাকে এক স্থান ত্যাগ করে ভিন্ন স্থানে গমনের ক্ষেত্রে। শরিয়তের পরিভাষায় হিজরত হল—
مفارقة دار الكفر إلى دار الإسلام خوف الفتنة، وطلبا لإقامة الدين.


দ্বীন প্রতিষ্ঠা ও ফেতনা হতে আত্মরক্ষার মহতী ব্রত নিয়ে দারুল কুফর ত্যাগ করে দারুল ইসলামে গমন।
دنيا দাল অক্ষরটি পেশ বা যের যুক্ত। তবে পেশ-যুক্তই অধিক প্রসিদ্ধ। অর্থ নিকটতর। পার্থিব জগৎকে দুনিয়া নামে অবহিত করা হয়েছে, কারণ, তা ধ্বংসের খুবই নিকটতর, কিংবা পরজগতের পূর্বে এই জগতের আবির্ভাব হয়েছে বিধায় তার ‘দুনিয়া’ নামকরণ করা হয়েছে। এখানে উদ্দেশ্য পার্থিব জগতের ধন-সম্পদ, ঐশ্বর্য-খ্যাতি ও পদবী—ইত্যাদি।
يُصِيْبُهَا অর্থাৎ তা লাভ করবে।


বিধান ও ফায়দা :—
অর্থ, মর্ম ও ব্যাপ্তির বিচারে হাদিসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, মহিমান্বিত ও ব্যাপক। নি:সন্দেহে তা দ্বীনের অন্যতম মৌলিক ভিত্তি। এ কারণে অনেক সালাফে সালিহীন (উত্তম পূর্ব-সুরী) এর গুরুত্ব, মাহাত্ম্য, ও তাৎপর্য তুলে ধরেছেন। আল্লামা ইবনে রজব রহ. বলেন—
وبه صدر البخاري كتابه الصحييح، وأقامه مقام الخطبة له، إشارة منه إلى أن كل عمل لايراد به وجه الله فهو باطل لا ثمرة له في الدنيا ولا في الآخرة.


ইমাম বোখারি র. তাঁর কিতাব সহিহ বোখারির প্রারম্ভে ভূমিকা স্বরূপ হাদিসটির অবতারণা করে এ বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন যে, আল্লাহর সন্তুষ্টিই একমাত্র উদ্দেশ্য নয়—এমন সকল আমল বাতিল হিসেবে পরিত্যাজ্য, এ ধরনের আমল দুনিয়া ও আখেরাতে চূড়ান্তভাবে প্রতিফলশূন্য। ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেছেন :—
هذا الحديث ثلث العلم، ويدخل في سبعين بابا من الفقه.


এ হাদিস দ্বীনের যাবতীয় উলুমের এক তৃতীয়াংশ, এবং ফিকাহ শাস্ত্রের সত্তুরটি অনুচ্ছেদে (প্রমাণ, প্রতিপাদ্য বা অন্য যে কোনভাবে) উল্লেখিত। ইমাম আহমদ রহ. বলেছেন :—
أصول الإسلام على ثلاثة أحاديث:


ইসলামের ভিত্তি তিনটি হাদিসের উপর স্থাপিত।
এক : উমর রহ. কর্তৃক বর্ণিত হাদিস— إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِঅর্থ : সকল আমলের ফলাফল নিয়তের উপর নির্ভরশীল।


দুই : আয়েশা কর্তৃক বর্ণিত হাদিস :—


من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد
অর্থ : যে ব্যক্তি আমাদের এই দ্বীনে অন্তর্ভুক্ত নয়—এমন নতুন কিছু আবিষ্কার বা সংযোজন করবে, তা গ্রহণযোগ্য নয়।


তিন : নোমান ইবনে বশীর কর্তৃক বর্ণিত হাদিস : الحلال بين والحرام بين অর্থ : হালাল বিষয়ও সুস্পষ্ট, হারাম বিষয়ও সুস্পষ্ট।


মাসায়েল ও উপকারিতা :
এক : ইসলামি শরিয়তে নিয়তের অবস্থান অতি উঁচু স্থানে, তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। আমল গ্রহণযোগ্য হয় না বিশুদ্ধ নিয়ত ব্যতীত। আমলের শুদ্ধি ও গ্রহণযোগ্যতার অন্যতম শর্ত হচ্ছে নিয়ত। এ কারণে আল্লাহ তাআলা সকল এবাদতে নিয়তকে খাঁটি করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন—আল্লাহ তাআলা বলেছেন:—
فَاعْبُدِ اللَّهَ مُخْلِصًا لَهُ الدِّينَ


‘তুমি আল্লাহর এবাদত কর তাঁরই জন্য এবাদতকে বিশুদ্ধ করে। তিনি আরো বলেছেন :—
وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ


‘তাদের শুধু এ নির্দেশই দেয়া হয়েছে যে, তারা যেন একনিষ্ঠভাবে খাঁটি নিয়তে আল্লাহরই এবাদত করে।’


কাজেই বিশুদ্ধ নিয়ত ছাড়া কোন আমল কিছুতেই সঠিক হতে পারে না। যার সালাতের লক্ষ্য গায়রুল্লাহর সন্তুষ্টি, তার নামাজ গ্রহণযোগ্য নয় কোনভাবে। অনুরূপভাবে, যার জাকাত দানের পেছনে লোক দেখানোর মত কপটাচার-কুমতলব লুকিয়ে থাকে তার সেই জাকাত আদৌ কবুল করা হবে না। এমনিভাবে কোন আমল সহিহ নিয়ত ছাড়া গৃহীত হয় না।


দুই : সালাফে সালিহীন রহ. নিয়ত বিষয়টির প্রতি অতি গুরুত্ব দিয়েছেন। তারা তার প্রতি রাখতেন সর্বোচ্চ সতর্কতা ও সজাগ দৃষ্টি। গুরুত্ব ও সতর্কতা প্রমাণ করে তাদের এমন কিছু উক্তি নিম্নে পেশ করা হচ্ছে :—উমর রা. বলেছেন—
لا عمل لمن لا نية له، ولا أجر لمن لا حسبة له.


যার নিয়ত নেই, তার কোন আমল নেই।


অর্থাৎ যার কোন সওয়াবের উদ্দেশ্য নেই, তার কোন পুরস্কার নেই। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. থেকে বর্ণিত—
لا ينفع قول إلا بعمل، ولا عمل إلا بنية، ولا ينفع قول ولا عمل ولا نية إلا بما وافق السنة.


কর্ম ব্যতীত বাকোয়াজিতে কোন ফল নেই, আর নিয়ত ব্যতীত কর্ম অসার। কর্ম, কথা ও নিয়ত কোন কাজে আসবে না, যতক্ষণ না তা রাসূলের সুন্নতের অনুসারে করা হবে। দাউদ তাঈ রহ. বলেন :—
رأيت الخير كله إنما يجمعه حسن النية.


আমি দেখেছি, কল্যাণের সুসন্বিবেশ হয় পরিশুদ্ধ নিয়তের মাধ্যমে। ইবনে মোবারক রহ. বলেন—
رب عمل صغير تعظمه النية، ورب عمل كبير تصغره النية.


নিয়ত অনেক ক্ষুদ্র আমলকে মহৎ আমলে রূপান্তরিত করে। পক্ষান্তরে, অনেক বৃহৎ আমলকেও তা ক্ষুদ্র করে দেয়।


তিন : উক্ত হাদিস থেকে এ বিষয়টি সাব্যস্ত হয় যে, মানুষ তার নিয়ত অনুসারেই কৃতকর্মের ফলাফল লাভ করে। এমনকি, সে নিজের ব্যবহারিক জীবনে পানাহার, উপবেশন, নিদ্রা—প্রভৃতির ন্যায় যে কর্মগুলো স্বীয় অভ্যাস-বশে সম্পাদন করে, সে সব কর্ম ও সদিচ্ছাও সৎ নিয়তের বদৌলতে পুণ্যময় কর্মে পরিণত হতে পারে। পারে পুরস্কার বয়ে আনতে এরই মধ্য দিয়ে। সুতরাং কেউ হালাল খাবার খাওয়ার সময় উদর ও প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি এবাদতের শক্তি-ক্ষমতা লাভের এরাদাও যদি করে নেয়, তাহলে এর জন্য সে অবশ্যই পুরস্কৃত হবে। এমনিভাবে মনোমুগ্ধকর ও মনোরঞ্জক যে কোন সু-স্বাদু বৈধ বিষয়ও নেক নিয়তের সঙ্গে উপভোগ করলে তা বন্দেগিতে রূপান্তরিত হয়। যেমন, আবু যর কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদকা বিষয়ক আলাপকালে বলেছেন :—


وفي بضع أحدكم صدقة، قالوا يا رسول الله أيأتي أحدنا شهوته ويكون له فيها أجر ؟ قال: نعم، أرأيتم لو وضعها في حرام يكون عليها وزر ؟ قالوا : نعم، فكذلك إذا وضعها في حلال فله فيها أجر.
তোমাদের প্রত্যেকের লজ্জাস্থানে (স্ত্রী সম্ভোগে) সদকার সওয়াব রয়েছে। তখন উপস্থিত সাহাবিগণ বললেন : হে আল্লাহর রাসূল ! আমাদের কেউ যদি স্বীয় স্ত্রীর নিকট যৌন-চাহিদা পূরণের জন্য গমন করে তাহলে এতেও কি তার জন্য পুরস্কার আছে ? তিনি উত্তর বললেন : হাঁ, তোমরা কী মনে কর, সে যদি কোন হারাম পাত্রে তার যৌন-চাহিদা পূরণ করে তবে এতে তার পাপ হবে ? তারা জবাব দিলেন, হাঁ ! তখন তিনি বললেন, ঠিক তদ্রুপ সে যদি কোন হালাল পাত্রে নিজের যৌন-চাহিদা মেটায় তাহলে তার জন্য তাতে পুরস্কার থাকবে।


সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা. হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন:—


إنك لن تنفق نفقة تبتغي بها وجه الله إلا أجرت بها، حتى ما تجعله في فيّ امرأتك.


নি:সন্দেহে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের লক্ষ্যে তোমার যে কোন ব্যয়ের পরিবর্তে তুমি পুরস্কার প্রাপ্ত হবে। এমনকি, পানাহার হিসাবে যা-ই তুমি নিজের স্ত্রীর মুখে দেবে তার জন্যও তুমি পুরস্কৃত হবে।


চার : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :—


إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَ إِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى


‘সমস্ত আমলই নিয়তের উপর নির্ভরশীল এবং নিয়ত অনুযায়ীই প্রত্যেকের কর্মফল বিবেচিত হয়।’ এই হাদিসটি প্রমাণ করে, বিশুদ্ধ ঈমানের জন্য শুধু মৌখিক স্বীকৃতি যথেষ্ট নয়, বরং হৃদয়ের দৃঢ় বিশ্বাসও একান্ত আবশ্যক। কেননা, ঈমান মৌখিক স্বীকৃতি, আত্মার বিশ্বাস এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমলের সমন্বয়ে গঠিত, যা আল্লাহর আনুগত্য দ্বারা বৃদ্ধি এবং তার নাফরমানি দ্বারা হ্রাস পায়।


পাঁচ : উক্ত হাদিস থেকে এই ভয়ানক হুমকিও প্রমাণিত হয় যে, যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করবে যার লক্ষ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি নয়, তবে তার কৃত-কর্ম না পুরস্কার যোগ্য, না গ্রহণযোগ্য। যেমন : কেউ লোক প্রদর্শনের নিয়তে জিহাদে যোগদান করল অথবা কেউ সুনাম-সুখ্যাতি কুড়ানোর মানসে ধন-দৌলত ব্যয় করল, অথবা ‘আলেম’ উপাধি লাভের লোভে জ্ঞানার্জন করল, অথবা ‘তার কোরআন পাঠ কতই না সুন্দর’—এই প্রশংসা পাওয়ার উদ্দেশ্যে তা শিক্ষা করল। অনুরূপভাবে তাদের ন্যায়, যাদের কর্ম-কাণ্ডের নেপথ্যে কুমতলব কিংবা কু-নিয়ত কার্যকর থাকবে, তাদের সকলের পুনরুত্থান ঘটবে নিজ নিজ নিয়ত অনুযায়ীই। আল্লাহ তাআলা বলেন :—


مَنْ كَانَ يُرِيدُ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا نُوَفِّ إِلَيْهِمْ أَعْمَالَهُمْ فِيهَا وَهُمْ فِيهَا لَا يُبْخَسُونَ ﴿১৫﴾ أُولَئِكَ الَّذِينَ لَيْسَ لَهُمْ فِي الْآَخِرَةِ إِلَّا النَّارُ وَحَبِطَ مَا صَنَعُوا فِيهَا وَبَاطِلٌ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ


যারা পার্থিব জীবন ও তার চাকচিক্য কামনা করে, আমি তাদের দুনিয়াতে আমলের প্রতিফল ভোগ করিয়ে দেই এবং তাতে তাদের প্রতি কিছুমাত্র কমতি করা হয় না। এরাই বরবাদগ্রস্ত এবং যা কিছু উপার্জন করেছিল সব বিনষ্ট হয়ে গিয়েছে।


যে সকল মুসল্লিদের সালাতের নেপথ্যে লুক্কায়িত থাকে লোক-দেখানো ও যশ-খ্যাতির মনোভাব, তাদের সম্বন্ধে আল্লাহ তাআলা বলেন :—


فَوَيْلٌ لِلْمُصَلِّينَ ﴿৪﴾ الَّذِينَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ ﴿৫﴾ الَّذِينَ هُمْ يُرَاءُونَ ﴿৬﴾ وَيَمْنَعُونَ الْمَاعُونَ ﴿
৭﴾
‘অতএব, দুর্ভাগ্য সে সব সালাত আদায়কারীর, যারা তাদের সালাত সম্বন্ধে বে-খবর। যারা তা লোক-দেখানোর জন্য করে। এবং নিত্য ব্যবহার্য বস্তু অন্যকে দেয় না।’


ছয় : দারুল ইসলাম (ইসলামিক অঞ্চল)-এর উদ্দেশ্যে দারুল কুফর (কুফর অধ্যুষিত এলাকা) ত্যাগ একটি মহৎ কর্ম। যেহেতু দ্বীনের সুরক্ষা ও প্রতিষ্ঠা বিষয়টির সাথে জড়িত, সেহেতু ইসলাম তার প্রতি দিয়েছে অনুপ্রেরণা, দিয়েছে জোর তাগিদ। সুতরাং হিজরতকারী যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর দেয়া পুরস্কার গ্রহণের উদ্দেশ্যে হিজরত করে, তাহলে সে উক্ত সৎকর্মের জন্য পুরস্কার প্রাপ্ত হবে। আর যদি তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে বিয়ে-শাদি, ধন-দৌলতের ন্যায় পার্থিব বস্তু হয়, তবে এমন হিজরতের জন্য তাকে পুরস্কৃত করা হবে না। বৈষয়িক বস্তুই হবে তার একমাত্র প্রাপ্তি।


সাত : ছোট, বড় সর্ব প্রকার পাপাচার সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করাও মহান হিজরতের অন্যতম মর্ম এবং এটাই প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব ও কর্তব্য। এভাবে তা পরিহার করতে পারলে তা তার জন্য বয়ে আনবে উত্তম বদলা। কেননা, ঈমানদার ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোন কিছু পরিহার করলে তিনি তাকে এর জন্য মহা পুরস্কার দান করেন।


-----------------------------------


১। বোখারি, মুসলিম।


২। যাদুদ দায়িয়াহ : পৃষ্ঠা : ৫


৩। বিনা বাধায় ইসলাম পালন করা যায় যে ভূমিতে, তাকে বলে দারুল ইসলাম ; অপরদিকে ইসলাম যেখানে অবাধ নয়, নানা প্রতিকুলতায় সীমাবদ্ধ, তাকে বলে দারুল কুফুর।
৪। বোখারি
৫। যাদুদ দায়িয়াহ : পৃষ্ঠা : ৬
৬। মুসলিম
৭। সূরা যুমার : ২
৮। সূরা বায়্যিনাহ : ৫
৯। যাদুদ দায়িয়াহ : পৃষ্ঠা : ৬
১০। প্রাগুক্ত : ৬
১১। প্রাগুক্ত : ৬
১২। প্রাগুক্ত : ৬
১৩। মুসলিম-১০০৬
১৪। বোখারি-৫৬
১৫।বোখারি ও মুসলিম
১৬। সূরা হুদ ১৫-১৬


১৭। সূরা মাউন ৪-৬

How To Erase Our Sins

Following is a compilation of Ahadîth that speaks of ways in which we can erase our sins, InshaAllâh!
Repenting


A servant [of Allâh's] committed a sin and said: O Allâh, forgive me my sin. And He (glorified and exalted be He) said: My servant has committed a sin and has known that he has a Lord who forgives sins and punishes for them. Then he sinned again and said:O Lord, forgive me my sin. And He (glorified and exalted be He) said: My servant has committed a sin and has known that he has a Lord who forgives sins and punishes for them. Then he sinned again and said: O Lord, forgive me my sin. And He (glorified and exalted be He) said: My servant has committed a sin and has known that he has a Lord who forgives sins and punishes for sins. Do what you wish, for I have forgiven you. [Hadîth Qudsi]
O son of Adam, so long as you call upon Me and ask of Me, I shall forgive you for what you have done, and I shall not mind. O son of Adam, were your sins to reach the clouds of the sky and were you then to ask forgiveness of Me, I would forgive you. O son of Adam, were you to come to Me with sins nearly as great as the earth and were you then to face Me, ascribing no partner to Me, I would bring you forgiveness nearly as great at it. [Hadîth Qudsi]


Abû Bakr radhiAllâhu `anhu reported:


"I heard the Prophet sallAllâhu `alayhi wa sallam saying: 'Allâh forgives the man who commits a sin (then feels ashamed), purifies himself, offers a prayer and seeks His forgiveness.' Then he recited the 'ayyah: 'And those who, when they do an evil thing or wrong themselves, remember Allâh and implore forgiveness for their sins - and who can forgive sins except Allâh? - and will not knowingly repeat (the wrong) they did. The reward of such will be forgiveness from their Lord, and gardens underneath which rivers flow, wherein they will abide forever- a bountiful reward for workers."' [al-'lmrân: 135-136]. [Abû Dawûd, an-Nasa'i, Ibn Majah, al-Baihaqi, and at-Tirmidhî who calls it hasan.]


Performing Wudhû
Narrated Abû Hurayrah radhiAllâhu `anhu: Allâh's Apostle sallAllâhu `alayhi wa sallam said:


When a bondsman - a Muslim or a believer - washes his face (in course of ablution), every sin he contemplated with his eyes will be washed away from his face along with water, or with the last drop of water ; when he washes his hands, every sin they wrought will be effaced from his hands with the water, or with the last drop of water; and when he washes his feet, every sin towards which his feet have walked will be washed away with the water, or with the last drop of water, with the result that he comes out pure from all sins. [Sahîh Muslim]


Narrated Uthmân ibn AffânradhiAllâhu `anhu:


The Messenger of Allâh sallAllâhu `alayhi wa sallam said: He who performed ablution well, his sins would come out from his body, even coming out from under his nails. [Sahîh Muslim]


Performing Prayer
Narrated Uthmân ibn Affân radhiAllâhu `anhu: "I heard Allâh's Apostle sallAllâhu `alayhi wa sallam say:


When the time for a prescribed prayer comes, if any Muslim performs ablution well and offers his prayer) with humility and bowing, it will be an expiation for his past sins, so long as he has not committed a major sin; and this applies to for all times. [Sahîh Muslim]


Narrated Abû Huraira radhiAllâhu `anhu: "Allâh's Apostle said,


"The congregational prayer of anyone amongst you is more than twenty (five or twenty seven) times in reward than his prayer in the market or in his house, for if he performs ablution completely and then goes to the mosque with the sole intention of performing the prayer, and nothing urges him to proceed to the mosque except the prayer, then, on every step which he takes towards the mosque, he will be raised o ne degree or o ne of his sins will be forgiven. The angels will keep o n asking Allâh's forgiveness and blessings for everyone of you so long as he keeps sitting at his praying place. The angels will say, 'O Allâh, bless him! O Allâh, be merciful to him!' as long as he does not do Hadath or a thing which gives trouble to the other." The Prophet further said, "One is regarded in prayer so long as o ne is waiting for the prayer." [Sahîh Al-Bukhari]


Narrated Abû Hurayrah radhiAllâhu `anhu:


"The Messenger of Allâh sallAllâhu `alayhi wa sallam said: He who purified himself in his house, and then he walked to o ne of the houses of Allâh for the sake of performing a fard (obligatory act) out of the Fara'id (obligatory acts) of Allâh, both his steps (would be significant) as o ne of them would obliterate his sin and the second o ne would raise his status. [Sahîh Muslim]


Attending the Jumu'ah Salâh
Narrated Abû Hurayrah radhiAllâhu `anhu: The Messenger of Allâh sallAllâhu `alayhi wa sallam said:


Five prayers and from o ne Friday prayer to (the next) Friday prayer is an expiation (of the sins committed in between their intervals) if major sins are not committed. [Sahîh Muslim]


Narrated by Salman Al Farsi radhiAllâhu `anhu: The Prophet sallAllâhu `alayhi wa sallam said,


"Whoever takes a bath o n Friday, purifies himself as much as he can, then uses his (hair) oil or perfumes himself with the scent of his house, then proceeds (for the Jumua prayer) and does not separate two persons sitting together (in the mosque), then prays as much as (Allâh has) written for him and then remains silent while the Imam is delivering the Khutba, his sins in-between the present and the last Friday would be forgiven." [Sahîh Al-Bukhari]


Doing good deeds
Narrated Ibn Masud radhiAllâhu `anhu: A man kissed a woman and then came to Allâh's Apostle and told him of that, so this Divine Inspiration was revealed to the Prophet sallAllâhu `alayhi wa sallam:


"And offer Prayers perfectly at the two ends of the day, and in some hours of the night; (i.e. (five) compulsory prayers). Verily, the good deeds remove the evil deeds (small sins). That is a reminder for the mindful." (Qur'aan : 11.114) The man said, Is this instruction for me o nly?" The Prophet said, "It is for all those of my followers who encounter a similar situation." [Sahîh Al-Bukhari]


Performing Umrah and Hajj
Narrated by Abû Huraira : The Prophet sallAllâhu `alayhi wa sallam said,


"Whoever performs Hajj for Allâh's pleasure and does not have sexual relations with his wife, and does not do evil or sins then he will return (after Hajj free from all sins) as if he were born anew." [Sahîh Al-Bukhari]


Abdullah ibn Mas'ud radhiAllâhu `anhu narrated that the Prophet sallAllâhu `alayhi wa sallam said:


"Alternate between Hajj and 'Umrah (regularly), for these two remove poverty and sins just as the blacksmith's bellows removes all impurities from metals like iron, gold and silver. The reward for Hajj Mabrur is nothing short of Paradise." [Nasa'i and Tirmidhi, who regards it a sound hadîth ]


Narrated Abû Huraira radhiAllâhu `anhu: Allâh's Apostle sallAllâhu `alayhi wa sallam said,


"(The performance of) 'Umra is an expiation for the sins committed (between it and the previous o ne). And the reward of Hajj Mabrur (the o ne accepted by Allâh) is nothing except Paradise." [Sahîh Al-Bukhari]


Saying Amîn'
Narrated by Abû Huraira radhiAllâhu `anhu: The Prophet sallAllâhu `alayhi wa sallam said,


"When the Imâm says 'Aamîn', then you should all say ‘Aamîn’, for the angels say ‘آmîn’ at that time, and he whose ‘آmîn’ coincides with the ‘آmîn’ of the angels, all his past sins will be forgiven." [Sahîh Al-Bukhari]


Fasting and performing prayers in the night of Qadr in Ramadân
Narrated by Abû Huraira radhiAllâhu `anhu: The Prophet sallAllâhu `alayhi wa sallam said,


"Whoever fasted the month of Ramadân out of sincere Faith (i.e. belief) and hoping for a reward from Allâh, then all his past sins will be forgiven, and whoever stood for the prayers in the night of Qadr out of sincere Faith and hoping for a reward from Allâh, then all his previous sins will be forgiven ." [Sahîh Al-Bukhari]


Sending salutations
Abû Talha Al Ansari radhiAllâhu `anhu said, "The Prophet, sallAllâhu `alayhi wa sallam, woke up o ne day cheerful and beaming. His companions exclaimed, 'O Prophet of Allâh, you woke up today cheerful and beaming.' He replied,


'Yes! A messenger of Allâh, the Mighty and the Glorified, came to me and said, "If anyone from your ummah sends you a salutation, Allâh will record for him ten good deeds, wipe off ten of his sins, and raise him thereby ten degrees in rank, and He will return his salutation with a similar salutation".' [Ahmad] Ibn Kathîr considers this a sound hadîth ]


Being kind to animals
Narrated Abû Huraira radhiAllâhu `anhu: Allâh's Apostle sallAllâhu `alayhi wa sallam said,


"While a man was walking he felt thirsty and went down a well and drank water from it. o n coming out of it, he saw a dog panting and eating mud because of excessive thirst. The man said, 'This (dog) is suffering from the same problem as that of mine. So he (went down the well), filled his shoe with water, caught hold of it with his teeth and climbed up and watered the dog. Allâh thanked him for his (good) deed and forgave him." The people asked, "O Allâh's Apostle! Is there a reward for us in serving (the) animals?" He replied, "Yes, there is a reward for serving any animate." [Sahîh Al-Bukhari]


Narrated Abû Huraira radhiAllâhu `anhu: Allâh's Apostle sallAllâhu `alayhi wa sallam said,


"A prostitute was forgiven by Allâh, because, passing by a panting dog near a well and seeing that the dog was about to die of thirst, she took off her shoe, and tying it with her head-cover she drew out some water for it. So, Allâh forgave her because of that." [Sahîh Al-Bukhari]


Leaving grey hair
Amr ibn Shu'aib related o n the authority of his father from his grandfather that the Prophet sallAllâhu `alayhi wa sallam said,


"Do not pluck the grey hairs as they are a Muslim's light. Never a Muslim grows grey in Islam except that Allâh writes for him, due to that, a good deed. And he raises him a degree. And he erases for him, due to that, o ne of his sins." [Related by Ahmad, Abû Dawûd, at-Tirmidhi, an-Nasa'i and Ibn Majah] And Anas said, "We used to hate that a man should pluck out his white hairs from his head or beard." [Sahîh Muslim]


Some simple supplications through which we can erase our sins, Insha'Allâh!
Narrated Abû Huraira radhiAllâhu `anhu: Allâh's Apostle said,


"Whoever says, 'Subhan Allâh wa bihamdihi,' o ne hundred times a day, will be forgiven all his sins even if they were as much as the foam of the sea." [Sahîh Al-Bukhari]


Narrated Abû Huraira radhiAllâhu `anhu: Allâh's Apostle sallAllâhu `alayhi wa sallam said,


"Whoever says: 'La ilaha illal-lah wahdahu la sharika lahu, lahu-l-mulk wa lahu-l-hamd wa huwa 'ala kulli shai'in qadir,' o ne hundred times will get the same reward as given for manumitting ten slaves; and o ne hundred good deeds will be written in his accounts, and one hundred sins will be deducted from his accounts, and it (his saying) will be a shield for him from Satan o n that day till night, and nobody will be able to do a better deed except the o ne who does more than he." [Sahîh Al-Bukhari]


Narrated Abû Hurayrah radhiAllâhu `anhu: Allâh's Apostle sallAllâhu `alayhi wa sallam said:


If anyone extols Allâh after every prayer thirty-three times [SubhanAllâh], and praises Allâh thirty-three times [Alhamdulillah], and declares His Greatness thirty-three times [Allâh hu Akbar], ninety-nine times in all, and say to complete a hundred: "There is no god but Allâh, having no partner with Him, to Him belongs sovereignty and to Him to praise due, and He is Potent over everything," his sins will be forgiven even if these are as Abûndant as the foam of the sea. [Sahîh Muslim]


Abû Hurairah radhiAllâhu `anhu reported that the Prophet, sallAllâhu `alayhi wa sallam, said,


"If anyone sits in an assembly where there is much clamor and says before getting up to leave, "Subhanaka Allâhumma wa bihamdika, ashadu an-la illaha illa-anta, astaghfiruka wa atubu ilayka" (Glory be to You, O Allâh, and I begin with declaring all praise is due to You, I testify that there is no god but You; I ask Your pardon and turn to You in repentance), he will be forgiven any sin that he might have committed while in that assembly. [Tirmidhi and Al-Baihaqi, (Kitab ad-D'wat Al-kabir)]


Mu'adh b. Anas radhiAllâhu `anhu reported that the Prophet, sallAllâhu `alayhi wa sallam, said,


"If anyone wears a new garment and says, "Alhamdu lillahillazi kasaabi hazaa wa razakabehi min ghairi hawlin minna walaa kuwwata" 'All praise be to Allâh, Who clothed me with this garment and provided it for me, with no power or strength from myself' Allâh will forgive all his previous sins." [Abû Dawûd, At-Tirmidhi and Ibn Maajah]

81 ways to win your Wife’s love


In today’s life of hustle and bustle, the family unit is becoming fragile by the day. Divorces are on the rise, and Muslims can no longer claim, as justifiably as before, that divorce is rare among Muslims or even much less than incidents of divorce among non-Muslims. The article, originally contributed by several bloggers and readers on MuslimMatters.org, is divided in two parts and will list out ways to keep up your spouse’s love. Feel free to write to us your own list with experiences. Having said that, let’s take on the men first, here’s how you can keep up your wife’s love:






1. Make her feel secure, don’t threaten her with divorce.
2. Give sincere Salaams.
3. Treat her gently, like a fragile vessel.
4. Advise in private, at the best time, in the best way and atmosphere.
5. Be generous with her.
6. Warm the seat for her, you will warm her heart.
7. Avoid anger, be in Wudhu at all times.
8. Look good and smell great for your wife.
9. Don’t be rigid or harsh-hearted or you will be broken.
10. Be a good listener.
11. Yes for flattery. No for arguing.
12. Call your wife with the best names, cute nicknames, and names she loves to hear.
13. A pleasant surprise.
14. Preserve and guard the tongue.
15. Expect, accept, and overlook her shortcomings.
16. Give sincere compliments.
17. Encourage her to keep good relations with her family.
18. Speak of the topic of her interest.
19. Express to her relatives, how wonderful she is.
20. Give each other gifts.
21. Get rid of routine, surprise her.
22. Have a good opinion of each other.
23. Have good manners, overlook small things, don’t nitpick.
24. Add a drop of patience, increase during pregnancy, menses.
25. Expect and respect her jealously.
26. Be humble.
27. Sacrifice your happiness for hers.
28. Help at home, with housework.
29. Help her love your relatives, but don’t try to force her.
30. Let her know that she is the ideal wife for you.
31. Remember your wife in Du’a.
32. Leave the past for Allah, don’t dwell on, dig into, or bring it up.
33. Don’t act as if you are doing her a favor by working or providing, Allah is the Provider, the husband is the carrier of the sustenance to the family.
34. Take Shaitan as your enemy, not your wife.
35. Put food in your wife’s mouth.
36. Treat your wife like she is the most precious pearl that you want to protect.
37. Show her your smile.
38. Don’t ignore the small things, deal with them before they be come big.
39. Avoid being harsh-hearted.
40. Respect and show that you appreciate her thinking.
41. Help her to find and build her inner strengths and skills.
42. Respect that she might not be in mood for intimacy, stay within Halaal boundaries.
43. Help her take care of the children.
44. Give her gifts with your tongue, be an artist with your compliments.
45. Sit down and eat meals together.
46. Let her know that you will be traveling or returning from travel, give her sufficient notice.
47. Don’t leave home in anger.
48. Maintain the secrecy and privacy of the home.
49. Encourage each other in worship.
50. Respect and fulfill her rights upon you.
51. Live with her in kindness, goodness, fairness in good and bad times.
52. Kiss your wife, foreplay, don’t jump on her like a bull.
53. Keep disputes between the two of you, don’t take it outside.
54. Show care for her health and well-being.
55. Remember you are not always right or perfect yourself.
56. Share your happiness and sadness with her.
57. Have mercy for her weaknesses.
58. Be a firm support for her to lean on.
59. Accept her as is, she is a package deal.
60. Have a good intention for her.
61. Cook a dish for her.
62. Designate a nice, clean, spacious area in your home for the two of you to pray at night whenever you can.
63. Women love flowers. Make a trail of them on the floor leading to the gift you made for her.
64. Give her a nice massage when she least expects it.
65. Send your wife a text message out of the blue with a message of love.
66. Send your wife an email without a reason.
67. Go out on a date or a get-away for the weekend in a nice location, preferably without kids.
68. Do something for your wife’s family, whether it is a gift, or a chat with her teen brother who needs mentoring, or whatever. It will get you lots of brownie points.
69. Do not keep reminding and demanding your rights all the time.
70. Shop groceries for her and call her from the store and ask her what she needs for the home, for herself or for her to give to people as gifts.
71. Ask her if she would like to invite her female friends over for ladies only get together and arrange for the dinner.
72. Ask her to send gifts to her parents and siblings.
73. Help her parents pay off debt. Send her poor relatives some money.
74. Write love notes or poems and place them in the book she’s been reading.
75. If she tells you something she had just learned from the Qur’an or Hadith, do not dismiss her or ridicule her effort, instead listen to her and take her word.
76. Plant her a kitchen garden with all kind of herbs she needs for cooking.
78. Update her PC or laptop with a new one or get her a new mobile phone.
79. Learn to do a special massage technique and surprise her with your new expertise.
80. Teach your children to respect and honor their mother.
81. Be humorous with her when she makes a mistake in the kitchen (like when she put too much salt or burnt her baking).

হাদিস ৮

আবু হোরায়রা(রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী(সা:) বলেছেন: রমজানের রোজার পর
মর্যাদাপূর্ণ রোজা হচ্ছে আল্লাহর মাস মহররমের রোজা| আর ফরজ নামাজের পর
মর্যাদাপূর্ণ নামাজ হচ্ছে রাত্রির(তাহাজ্জুদ) নামাজ|(রিয়াদুস সালেহীন ১২৪৬)

হাদিস ৭

আবু হোরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত নবী (সা:) বলেছেন, মুনাফিকদের জন্য ফজর ও এশা নামাজ (নামাজের জামাতে উপস্থিত হওয়া) সর্বাপেক্ষা ভারী|(কারণ এটা কষ্টসাপেক্ষ; আর সওয়াবের উদ্দেশ্য তো তাদের নেই) লোকেরা যদি ফজর ও এশার জামাতের ফজিলত জানতো তবে হামাগুরি দিয়ে হলেও এই নামাজ দ্বয়ের জামাতে উপস্থিত হত | (বুখারী, রিয়াদুস সালেহীন ১০৭৩)

হাদিস ৬

ওসমান ইবনে আফ্ফান (রা:) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, আমি রাসুল (স:) কে বলতে শুনেছি ,
"যে ইশার সালাত জামাতে আদায় করলো সে যেন অর্ধ রাত সালাতে কাটিয়ে দিল । আর যে ফজরের সালাত জামাতে আদায় করলো সে যেন পুরো রাতই সালাতে কাটাল ।(মুসলিম )

হাদিস ৫

বলুন, তোমরা যে মৃত্যু থেকে পলায়নপর, সেই মৃত্যু অবশ্যই তোমাদের মুখামুখি হবে, অতঃপর তোমরা অদৃশ্য, দৃশ্যের জ্ঞানী আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে। তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবেন সেসব কর্ম, যা তোমরা করতে। (Al-Jumu'a: 8)

হাদিস ৪

রাসূল -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ হবার একটি সহজ পদ্ধতি শিখিয়ে গেছেনঃতোমাদের মাঝে শ্রেষ্ঠ হল যে নিজে কুর’আন শিখে এবং অন্যকে শেখায়। (আল-বুখারী)অতএব, আসুন, কুর’আন নিজে শিখুন এবং অন্যকে শিখান, নিজেকে শ্রেষ্ঠ মুসলিমদের একজন হিসেবে গড়ে তুলুন ইনশাআল্লাহ।

surat al- ikhlas

বলুন, তিনি আল্লাহ, এক, আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।
সূরা এখলাছ ( মক্কায় অবতীর্ণ ), আয়াত সংখাঃ ৪

হাদিস শিক্ষা

১।দুটি ক্ষুধার্ত বাঘকে ছাগলের পালের মধ্যে ছেড়ে দিলে ততটুকু ক্ষতিসাধন করতে পারে না,যতটুকু মানুষের মাল সম্পদ এবং সম্মান লাভের আকাঙ্খা করা তার দ্বীনের পক্ষে ক্ষতিকর।(তিরমিজি,দারেমি,
আহমদ,মুসলিম,আবু দাউদ,মিশকাত)


২।ধ্বংসকারী বস্তুগুলি হলো – কু-প্রবৃত্তির অনুসারী হওয়া,লোভলালসার
অনুগত হওয়া এবং নিজেকে ভাল মনে করা।আর এই হল সে গুলোর
মধ্যে সর্বাপেক্ষা জঘন্য।(বাইহাকী,মিশকাত)


৩।দুনিয়ার মহব্বত হল সমস্ত গুনাহের মাথা।(আহহমদ, বাইহাকী,হাকেম,
মিশকাত)


৪।যে ব্যাক্তি তার দুনিয়াকে মহব্বত করল সে তার আখেরাতের ক্ষতি
করল। (আহমদ,বাইহাকী,হাকেম,মিশকাত শরীফ)


৫।ধ্বংস হউক দীনারের গোলাম,দিরহামের গোলাম,উত্তম পোশাকের
গোলাম।(বুখারী ,মিশকাত শরীফ)
৬। এই উম্মতের সর্বপ্রথম মঙ্গল হল- এয়াকীন(দৃঢ় বিশ্বাস), এবং জুহদ(দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি)।আর সর্বপ্রথম অনিষ্ট হল-কৃপনতা ও দীর্ঘ আশা।(বাইহাকী,মিশকাত)
৭।দীর্ঘ আশা(দুরাকাঙ্ক্ষা) আখেরাতকে ভুলিয়ে দেয়।(বাইহাকী,মিশকাত)

কিভাবে নামাজের মাধূর্য আস্বাদন করা যায়? পর্ব ৮

নামাজের পূর্বেই নামাজের অবস্থায়:



যখন আমরা “সালাত”এর কথা বলে থাকি, আমরা সবাই মনে করি যে এটা আসলে শুরু হয় যখন আমরা দাঁড়িয়ে হাত তুলি এবং বলি “আল্লাহ আকবার”| কিন্তু আসল ঘটনা তা নয়, এটা “আল্লাহ আকবার” বলারও আগে থেকে শুরু হয়| নবী(সা:) বলেন:



لا زال أحدكم في صلاة ما انتظر الصلاة



“একজন যতক্ষণ নামাজের জন্যে অপেক্ষায় থাকে, তার জন্যে ঐ সম্পূর্ণ সময় নামাজের মধ্যে ধরা হয়|”(বুখারী, মুসলিম)

পুরুষদের জন্যে, এটা সেই সময় থেকে শুরু হয় যখন সে নামাজের জন্য প্রস্তুত হয়ে মসজিদে জামাতের সাথে নামাজের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে| যারা মসজিদে অবস্থান করছেন না এমন মহিলাদের জন্য এই নামাজের সময় শুরু হয় যখন তিনি অজু করে নামাজের জন্য সঠিক পোশাক(যদি তাঁর দরকার হয়) পরে নামাজের সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করেন তখন থেকে|



একটি গুপ্তধন:



নামাজের একটি গুরুত্বপূর্ন দিক যেটাকে আমরা আমলেই নেই না সেটা হল আজান| আমরা কি কখনো আজানের সুমধুর সুর-মূর্ছনা অনুভব করেছি? যে আজানের মাধুর্য আস্বাদন করে তার নামাজের খুশু বৃদ্ধি পায়| প্রশ্ন আসতে পারে যে খুশুর সাথে আজানের সম্পর্ক কি?



শয়তান নামাজকে ঘৃনা করে| নবী(সা:) বলেন, “যখন আজানের শব্দ উচ্চারিত হয়, শয়তান তখন সশব্দে বায়ু ছাড়তে ছাড়তে দৌড়ে পালিয়ে যায় যাতে তার কানে আর আজানের শব্দ না আসে| আজান শেষ হলে আবার ফিরে আসে; ইকামাতের সময় আবার সে পালিয়ে যায় এবং শেষ হলে আবার ফিরে আসে, এবং মানুষের মনকে ফিসফিসিয়ে ধোঁকা দিতে থাকে(যাতে নামাজ থেকে মনোযোগ সরে যায়) এবং মানুষকে এমন সব জিনিস মনে করিয়ে দেয় যা নামাজের পূর্বে তার মাথায় ছিলনা এবং যার কারণে মানুষ ভুলে যায় যে সে কতো রাকাত নামাজ পরেছে|” [বুখারী]



আজানের সময় হতেই শয়তান মানুষের মনকে অন্যদিকে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করতে থাকে, যাতে আজানের গুনাবলী থেকে সে কোন লাভ না পায়| তাহলে আজানের কি এমন বিশেষ গুন আছে?



আজান: একটি সুযোগ



নবী(সা:) বলেন:



المؤذن يغفر له بمد صوته ويصدقه من سمعه من رطب ويابس وله مثل أجر من صلى معه



“মুয়াজ্জিন(যিনি আজান দেন)কে তার আজান যতদুর পৌঁছে এবং যে তা শুনে আজানের শব্দ গুলোর সমর্থন দেয়(আজানের উত্তর) তার জন্য মাফ করে দেয়া হয়| যারা তার সাথে নামাজ পড়বে, তাকেও তাদের সমপরিমাণ সওয়াব দেয়া হবে|”



তাহলে যদি ৫০ জন মানুষ নামাজ পড়ে, মুয়াজ্জিন ৫০ জনের সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করে| যদি ১০০ জন নামাজ পড়ে তো ১০০ জনের সওয়াব পাবে| আমাদের প্রশ্ন হল: আমরা তো মুয়াজ্জিন না, আমাদের এতে কি লাভ আছে? হ্যাঁ, লাভ আছে, আমরাও মুয়াজ্জিনের সমপরিমাণ সওয়াব পেতে পারি| আবদুল্লাহ বিন আমর(রা:) বর্ণনা করেন যে এক ব্যক্তি নবী(সা:)কে জিগ্যেস করেন “মুয়াজ্জিন কি আমাদের চেয়ে বেশী সওয়াব পান?” এবং নবী(সা:) উত্তরে বলেন:



قل كما يقولون فإذا انتهيت فسل تعطه



“মুয়াজ্জিন যা বলে তা তুমিও বল আর যখন আজান শেষ হয়, তখন দোয়া করো, তাহলে তোমাকেও সে সওয়াব দেয়া হবে|”[আবু দাউদ]



যখন আজান “আল্লাহ আকবার” বলার মাধ্যমে শুরু হয় তখন, এটা আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চেষ্টা করে যে, আপনি যাই করছেন আল্লাহতায়ালা তার চেয়ে অনেক গুরত্বপুর্ন, তা সে টিভিতে কোন সিরিয়ালই হোক, অথবা নেটে বা পেপারে পড়া কোন লেখনী হোক আর কোন কথপোকথনই হোক| আর কেন আজান দেয়ার সাথে সাথে সবকিছু ছেড়ে নামাজের প্রস্তুতি নেবেন? কারণ-“লা-ইলাহা ইলা-আল্লাহ”-আপনি এক আল্লাহই বিশ্বাস করেন| যদি আজান আপনাকে আপনি যা করছেন তা থেকে সরিয়ে নামাজমুখী করতে না পারে তার মানে হল আপনি আল্লাহর চেয়ে এই কাজকে বেশী গুরুত্বপূর্ন মনে করছেন|




আল্লাহর অনুমোদন ছাড়া কারও কোন ক্ষমতা নেই



আমরা জানি যখন আমরা আজান শুনি তখন আমাদের উচিত মুয়াজ্জিন যা বলে তা নিজে নিজে বলা| এটাই আজানের উত্তর| তবে “হায়া’আলা আস-সালাহ” (নামাজের জন্যে আসো) এবং “হায়া’আলা আল-ফালাহ” (সাফল্যের দিকে এসো) এই দুটোর উত্তরে বলতে হয় “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইলা বিল্লাহ” (আল্লাহর অনুমোদন ছাড়া কারও কোনই ক্ষমতা নেই)|



এটা কেন বলি? আসলে এটা হল আল্লাহর কাছে আমাদের অসহায় আত্মসমর্পণ যে আল্লাহ তোমার সাহায্য ছাড়া নামাজে নিবিড় ভাবে মগ্ন থাকা আমাদের পক্ষে সম্ভব না, নামাজ সঠিকভাবে আদায় করাও সম্ভব না|



একটি আহ্ববান



মনে রাখা উচিত যে আজান হল আহ্ববান; এটা হল সবচেয়ে সুন্দর আহ্ববান যা আমাদেরকে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং একমাত্র ইবাদাতের যোগ্য আল্লাহর দিকে ডাকে| যখন আমরা আমাদের অনেক ভালোবাসার কারও কাছে যাই আমাদের মাঝে আবেগ-উত্তেজনা কাজ করে, এক ধরনের আকাঙ্খা কাজ করে| আর এসবই শুরু হয় যখন অনেক ভালোবাসার সে বলে “দশ মিনিটের মাঝেই আমি তোমার সাথে দেখা করছি” বা “তুমি আসো এখনই দেখা করবো”| আমাদের মাঝে এক আজব সুখের অনুভূতি খেলা করে| আয়েশা(রা:) বর্ণনা করেন নবী(সা:) বলেছেন:



من أحب لقاء الله أحب الله لقاءه



“যে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করতে পছন্দ করে, আল্লাহও তার সাথে সাক্ষাত করতে পছন্দ করেন|” (বুখারী)



আজান আমাদের বলে যে এখন আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের সময় হয়েছে| তাই যারা আল্লাহকে ভালোবাসে তারা তারাতারি করে প্রস্তুত হয়ে দেখা করতে মসজিদে বা জায়নামাজে দাড়িয়ে পড়ে, নামাজের শেষ সময়ের জন্য অপেক্ষা করে না| মুসা(আ:) কে দেখুন কি করেছিলেন:



وَمَا أَعْجَلَكَ عَن قَوْمِكَ يَا مُوسَى قَالَ هُمْ أُولَاءِ عَلَىٰ أَثَرِي وَعَجِلْتُ إِلَيْكَ رَبِّ لِتَرْضَىٰ ٰ



“(আল্লাহ বললেন)হে মূসা, তোমার সম্প্রদায়কে পেছনে ফেলে তুমি ত্বরা করলে কেন? তিনি(মুসা(আ:)) বললেনঃ এই তো তারা আমার পেছনে আসছে এবং হে আমার পালনকর্তা, আমি তাড়াতাড়ি তোমার কাছে এলাম, যাতে তুমি সন্তুষ্ট হও|” [সুরা তাহা ২০:৮৩-৮৪]



মুসা(আ:) আল্লাহকে প্রচন্ড ভালবাসতেন, এ কারণেই তারাতারি আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের আশায় এত জোর কদমে এগিয়ে গিয়েছিলেন যে তার সম্প্রদায় তাল মেলাতে না পেরে পিছিয়ে পরেছিলো|



আজান কে উপভোগ এবং উপলব্ধি করতে থাকুন, ইনশা-আল্লাহ নামাজও উপভোগ্য হয়ে উঠবে| ইয়া আল্লাহ, আপনি আমাদের নামাজ কে নিঁখুত ও সুন্দর করে তুলুন| আমীন|

কিভাবে নামাজের মধুরতা আস্বাদন করা যায়? পর্ব ৭

প্রশান্তির প্রতিবন্ধকতা



বিক্ষিপ্ত চিত্ত/মন!



আগের লেখা গুলোর সবই ছিলো ইট-কাঠ-পাথরের দেয়ালে আটকে থাকা আমাদের কঠিন হয়ে পরা অন্তরগুলোকে নরম করার জন্য- ওগুলোতে মূল নামাজের চেয়ে বেশী গুরত্ব দেয়া হয়েছে আল্লাহতায়ালাকে আরো ভালোভাবে জানার প্রতি, তাঁর প্রতি কি রকম অনুভূতি নিয়ে দাঁড়ানো উচিত- এসব নিয়ে, যাতে করে যখন আমরা নামাজে দাঁড়াই তখন আমরা যেনো এটা জেনে দাঁড়াই যে কোন মহান সত্তার সামনে আমরা দাঁড়িয়ে আছি| নামাজে আসার আগ মুহুর্তে অবশ্যই আগে যা শিখেছি সেগুলো মনে মনে স্মরণ করতে হবে, যাতে নামাজে আমাদের আর জড়তা না আসে, যাতে নামাজ আমাদের কাছে একটা নতুন মর্যাদা লাভ করে এবং আরও অর্থবহ হয়ে ওঠে|



এত কিছুর পরও আমাদের বেশির ভাগের নামাজেই বারবার বিঘ্ন ঘটে, মনোযোগ সরে যায় নিজের অজান্তেই| এটা ঠিক যে, আমরা আল্লাহতায়ালাকে ভালবাসি, তাঁকে ভয় পাই, তাঁর করুনা প্রত্যাশা করি কিন্তু তারপরও আমরা আমাদের মনকে শুধু নামাজের মাঝেই কেন্দ্রীভূত করতে পারিনা| উল্টাপাল্টা চিন্তা হুটহাট করে মাথার ভেতর উদয় হয়: মনে করতে চেষ্টা করি হারিয়ে যাওয়া মোবাইলটা কোথায় রেখেছিলাম, দিবাস্বপ্ন দেখত শুরু করি যে কিভাবে পৃথিবী থেকে সব সমস্যা দূর করা যায় অথবা আজ রাতে কি দিয়ে ভাত খাবো তা নিয়ে ভাবতে থাকি| আর এ সব কিছুর শুরু হয় যখন আমরা নামাজের জন্য হাত তুলে “আল্লাহ আকবার” বলে নামাজ শুরু করি ঠিক তখন থেকে| আর যখন সালাম ফেরাই তখনই সব চিন্তা হাওয়া হয়ে যায়|

হয়তো একটা জিনিসই আমাদের এসব অযাচিত চিন্তাভাবনা থেকে দুরে সরিয়ে রাখতে পারে আর তা হল: মনে প্রাণে এটা বিশ্বাস করা যে নামাজে পুরোপুরি একাগ্র না হলে সে নামাজ আমাদের কোনই কাজে আসবে না| কিন্তু আসলেই কি তাই? আমাদের মন সরে গেলে নামাজ কি ভেঙে যায়? না! নামাজ ভাঙ্গবে না, আদায় হয়ে যাবে, কিন্তু নামাজের সওয়াবের দিক থেকে এটা বিশাল পার্থক্য সৃষ্টি করবে| নবী(সা:) বলেন:








“বান্দা নামাজ আদায় করলে, সেই নামাজের এক-দশমাংশ বা এক-নবমাংশ বা এক-অষ্টমাংশ বা এক-ষষ্ঠাংশ বা এক-পঞ্চমাংশ বা এক-চতুর্থাংশ বা

এক-তৃতীয়াংশ অথবা অর্ধেক সওয়াব পেতে পারে|” [আবু দাউদ, আহমাদ]



কারণ:



ليس للمرء من صلاته إلا ماعقل منها



“বান্দা তার নামাজের শুধু মাত্র সেই অংশের সওয়াব পায়, যে টুকু অংশ সে সজ্ঞানে(বুঝে শুনে) করে|” [আবু দাউদ]



এটা দেখে আবার এ রকম মনে করা উচিত না যে, “থাক তাহলে নামাজ না পরাই ভালো” অথবা “আমার দ্বারা এরকম নামাজ কখনই হবে না”| ধরুন যে এক পথিক উত্তপ্ত মরুভুমির ভেতর হেটে যেতে যাচ্ছে, চলার এক পর্যায়ে তার একটা স্যান্ডেল ছিড়ে গেলো; তাই সে এক পায়ে স্যান্ডেল নিয়েই চলতে থাকলো| তারপর একসময় বলে উঠলো, “আমার এক পা তো মরুভুমির উত্তপ্ত বালিতে পুড়ছেই, যাকগে আরেকটা পাও পুড়িয়ে দেই|” আর তারপর সে ছেড়া স্যান্ডেল ঠিক করার চেষ্টা করা বাদ দিয়ে স্বেচ্ছায় আরেকটা স্যান্ডেল খুলে সেই পা টাও পোড়াতে লাগলো| এই ব্যক্তিকে কি বলবেন? নিশ্চিতভাবেই তাকে বোকা বা গাধা বা বলবেন মস্তিস্কবিকৃত মানুষ| এখন আমরা যদি নামাজ ঠিক করার বদলে হাল ছেড়ে দিই তাহলে আমাদের আর এই ব্যক্তির কোন পার্থক্য থাকলো কি?



একটি গোপন অস্ত্র



অবশেষে প্রথম রহস্য উন্মোচিত করা হবে এখন| এমন কঠিন কিছুই না, কিন্তু এটা খুবই তারাতারি আমাদের নামাজের ধরন পাল্টে দেবে| তার আগে একটা প্রশ্ন: বছরের কোন সময় টাতে আমাদের খুশু সবচেয়ে বেশী থাকে? খুবই সহজ উত্তর: রমজান মাসে| আর রমজানের কখন আমাদের খুশু সবচেয়ে বেশী থাকে? সম্ভবত রাতের নামাজের সময়| আর সেই নামাজের কখন সবচেয়ে বেশী মনযোগ থাকে, কখন সবচেয়ে বেশী অশ্রুপাত হয়? যখন আমরা দু’হাত তুলে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি| এই সময়টাতেই আসলে আমরা সেই গোপন অস্ত্রটি ব্যবহার করে থাকি|



কিভাবে? ঐ সময়টাতে আমরা সত্যিই আল্লাহর সাথে সরাসরি কথা বলতে থাকি, তাঁর কাছে দাবি নিয়ে চাইতে থাকি এবং তাঁর সাড়া পাবার আশা করতে থাকি| আর এই অনুভুতিটাই আমাদের মন ও অন্তরকে নামাজের ভেতরে মগ্ন করে ফেলে, আমরা নামাজের মাধূর্য অনুভব করতে থাকি|

তাহলে গোপন জিনিসটি কি? তিন বাক্যে বলা যেতে পারে:



১. আল্লাহর সাথে কথা বলা



২. আল্লাহকে তার বিভিন্ন নাম(নামের অর্থ বুঝে সেই গুনটির মূল্য বুঝে) ধরে ডাকা



৩. তাঁর কাছ থেকে পাবই এমন দাবি নিয়ে চাওয়া, কথোপকথন চালানো|



নবী(সা:) বলেন:



إذا كان أحدكم في الصلاة فإنه يناجي ربه



“নামাজের সময় বান্দা তাঁর রবের সাথে খুব আপনভাবে কথা বলে” [বুখারী, মুসলিম]



ইবনে উথায়মান বলেন যে যখন কেউ নামাজে প্রবেশ করে, তার এমন অনুভব করা উচিত যেন সে তাঁর রবের আরশের পাশে অবস্থান করছে এবং তাঁর সাথে কথা বলছে|



সমস্যা হল আমরা আমাদের নামাজে আল্লাহর সাথে যোগাযোগটাকে অনুভব করতে পারি না; আমাদের মনে হয় যে আমরা শুধু বলেই যাচ্ছি কোন উত্তরতো পাচ্ছি না, একপেশে সংলাপ বলে মনে হয়| আসলে আমরা যখন বলি “আলহামদুলিল্লাহি রব আল-আ’লামীন” আমাদের এইটা ভেতর থেকে অনুভব করতে হবে যে সত্যিই সকল প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা সারা বিশ্ব জগতের মালিক আল্লাহর| সেজদাহর সময় আমদের মনে এই অনুভূতি থাকতে হবে যে “ইয়া আল্লাহ আমাকে ফিরিয়ে দিও না, তুমি ছাড়া আমারতো কেউ নেই, আমাকে তোমার দুয়ার হতে ফিরিয়ে দিওনা|” শুধু মন্ত্র পাঠ করার মতো বারবার তাসবিহ পড়ে কোন লাভ নেই, যা বলবেন অর্থ বুঝে, বিশ্বাস করে, নিজেকে আল্লাহর কাছে সঁপে দিয়ে বলবেন| যদি এমনটা করতে পারেন তাহলে সব নামাজই রমজানের রাতের ক্রন্দনরত নামাজের মতো হবে|



আমরা যখন সেজদাহবনত থাকি, তখন আমাদের সবাই মুখস্ত করা তাসবিহ পড়ে থাকি| কিন্তু একজন অত্যন্ত পুন্যবান পূর্বসুরী এই সেজদাহবনত অবস্থার মূল্য জানতেন এবং দু’আর সাথে সাথে আল্লাহ কে বলতেন “ইয়া আল্লাহ, তোমার এই বান্দা(সে নিজেই) কি জান্নাতে না জাহান্নামে?” কতটা ঘনিষ্ঠতা খেয়াল করুন-তিনি জানতেন তিনি আল্লাহর খুব কাছে অবস্থান করছেন এবং এত মগ্নভাবে সেজদাহবনত ছিলেন যে তিনি অনুভব করছিলেন যে তিনি আল্লাহর সাথে সরাসরি কথা বলছেন|



শুধু পড়ার জন্য পড়া নয়



এই লেখা গুলো পড়া আর মাথা ঝাকানো খুব সোজা, দু’একটা জিনিস শিখলেন আর বললেন “ওহ এগুলোতো জানিই|” শুধু জেনে কোন লাভ নেই, যেটুকু জানলাম সেটুকু প্রয়োগ করা শুরু করি| চলুন সবাই মিলে একে অপরকে সাহায্য করে এই অল্প অল্প জ্ঞানগুলোকে প্রয়োগ শুরু করি:



১. এমন একজন বন্ধুকে সাথে নিন যার সাথে আপনি ইসলামের ব্যাপারে অনেক খোলামেলা| প্রত্যেক নামাজে আসার সময় একজন আরেকজনকে মনে করিয়ে দিন যে এখন আল্লাহর সাথে কথা বলতে যাচ্ছি| আল্লাহর গুনাবলী নিয়ে কথা বলুন, যেসকল কারণে তাঁর প্রতি আপনি কৃতজ্ঞ সেসব নিয়ে কথা বলুন, কথা বলুন কি কি কারণে আপনি তাঁর ক্ষমা প্রার্থনা করেন সে সব নিয়ে|



২. যখন জায়নামাজে দাঁড়িয়ে হাত তুলবেন “আল্লাহ আকবার” বলার জন্য, তা করবেন দৃঢ় প্রত্যয়ে, নিজেকে আল্লাহর কাছে পুরোপুরি সঁপে দিয়ে| মনে করবেন যেন আপনাকে এখন পৃথিবী থেকে তুলে নেয়া হচ্ছে, আপনার রুহকে তাঁর রবের কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আর এখনই আপনার সাথে আপনার রবের ঘনিষ্ঠ কথপোকথন শুরু হবে| এই জগতের আর কোন কিছুতেই আপনার আর মনোযোগ সরাতে পারবে না|



আল্লাহতায়ালা যেনো আমাদের নামাজকে নবী(সা:), তাঁর সাহাবাগণ(রা:) এবং তাদের যোগ্য উত্তরসূরীদের নামাজের মতো মাধুর্যময় করে তোলেন| আমীন|



[চলবে....(ইনশা-আল্লাহ)]

কিভাবে নামাজের মাধূর্য আস্বাদন করা যায়? পর্ব ৬

অনুগ্রহ






এখন পর্যন্ত আমরা সবাই বুঝতে পারছি যে নামাজে অবশ্যই আমাদের আবেগ নিয়ে দাড়াতে হবে; আবেগবিহীন নামাজ এখন আমাদের কাছে অতীত হয়ে গেছে| কারণ আমাদের নামাজ এখন আর শুধু নিয়ম মেনে উঠাবসা করাই নয়; বরং নামাজ মানে মহান আল্লাহতায়ালার সামনে দাঁড়ানো, তার সাথে কথা বলা| আর একটি মাত্র বিষয়ে কথা বলে ইনশা-আল্লাহ আগামী পর্ব থেকে আমরা নামাজের ভেতরে প্রবেশ করে প্রতিটা অংশ নিয়ে আলাদা আলাদা ভাবে আলোচনা করব| যে জিনিসটা নিয়ে আমাদের কথা না বললেই নয় সেটা হল আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহ এবং আশীর্বাদসরূপ দেয়া তাঁর অসংখ্য নিদর্শন সমূহ যা প্রতিনিয়ত আমাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করে চলেছে| এর কোন ভুমিকা টানার প্রয়োজন নেই| আল্লাহতায়ালা বলেন:






وَإِن تَعُدُّوا نِعْمَتَ اللَّهِ لَا تُحْصُوهَا






“যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর, তবে গুণে শেষ করতে পারবে না|” [সুরা ইবরাহীম ১৪:৩৪]






যখনই আমরা এই আয়াত শুনি তখনই এটা আমাদের ভাবিয়ে তোলে আমাদের যা আছে সেসব নিয়ে; আমাদের ঈমান থেকে শুরু করে পরিবার, সুস্বাস্থ্য, শিক্ষা ইত্যাদি; এছাড়াও যেসব জিনিস আমরা আমাদের জন্য অবধারিত ছিলো বলে ধরি যেমন কথা বলতে পারার ক্ষমতা, হাটা-চলার ক্ষমতা, দেখতে পাবার ক্ষমতা, শুনতে পাবার ক্ষমতা আরও কত কি| আমরা এসবকে আমাদের নিয়ামত হিসেবে দেখিইনা| এগুলোর আসল গুরুত্ব অনুভূত হয় যখন এগুলোর কোন একটি ছাড়া নিজের জীবন কল্পনা করব তখন; তখন বুঝে আসবে কত বড় নিয়ামত আল্লাহ তায়ালা আমাদের দিয়ে রেখেছেন অথচ তাঁর প্রতি আমরা কত অকৃতজ্ঞ| আল্লাহতায়ালা বলেন:






وَإِن تَعُدُّوا نِعْمَتَ اللَّهِ لَا تُحْصُوهَا ۗ إِنَّ الْإِنسَانَ لَظَلُومٌ كَفَّارٌ [١٤:٣٤]






“যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর, তবে গুণে শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় মানুষ অত্যন্ত অন্যায়কারী, অকৃতজ্ঞ|”[সুরা ইবরাহীম ১৪:৩৪]


এখন আমরা আরো দুটি নেয়ামত নিয়ে অল্প কিছু কথা বলবো: ঈমান(এক সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস) এবং আমান(নিরাপত্তা)|






ঈমান [إيمان]






আমরা খুবই ভাগ্যবান যে, আমরা জানি কে আমাদের পালনকর্তা(রব), এবং এও জানি যে তিনি এক, অদ্বিতীয়| কতো মানুষ তাদের বিধাতাকে তাঁরই বিভিন্ন সৃষ্টির মাঝে তাঁকে খুঁজে বেড়ায়, কতকিছুর পূজাই না সে করে, তা সে পশুপ্রানিই হোক, মানুষই হোক, কোন বস্তুই হোক অথবা নিজের প্রবৃত্তিই হোক| কিন্তু আমরা জানি, নামাজে আমরা আর কোন কিছুর পূজা করি না, শুধু মাত্র তাঁরই ইবাদত করি এবং সরাসরি তাঁরই কাছে এসে দাড়াই| আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন:






إِنَّنِي أَنَا اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدْنِي وَأَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي [٢٠:١٤]






আমিই আল্লাহ আমি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। অতএব আমারই এবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থেই নামায কায়েম কর। [তা-হা ২০:১৪]






আমান [أمن]






দুই ধরনের আমান বা নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলবো আমরা: অভ্যন্তরীণ আর বাহ্যিক| অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থার একটি আদর্শ উদাহরণ হল আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা| আমরা এ ব্যাপারে খুব কমই নজর দেই বা খেয়াল করি| আমাদের শ্বেত রক্তকনিকা সব সময় দেহে প্রবেশ করা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দের ধ্বংস করে চলেছে| চলুন দেখে আসি দেহের ভেতরে কি হয়|






(http://www.youtube.com/watch?v=JnlULOjUhSQ ১ MB) বড় যে সচল কোষটি দেখা যাচ্ছে সেটা হল শ্বেত রক্তকনিকা| গোল গোল প্রায় স্থির গুলো হল লোহিত রক্তকনিকা| আর পিপড়ার মতো কালো ছোট জিনিসটা হল ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া| আমাদের অজান্তেই, আমাদের কোন প্রচেষ্টা ছারাই কিভাবে আল্লাহতায়ালার সৃষ্ট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আমাদের প্রতিনিয়ত বাঁচিয়ে রাখছে, সত্যিই অসাধারণ|






আর বাহ্যিক নিরাপত্তা? আমাদের কেউ কি আজ সকালে ঘুম ভেঙে উঠার সময় ভেবেছে যে কেউ হয়তো তাকে হত্যা করবে? অথবা আজ আমার বাসায় ডাকাতি হবে? কেউ ভাবিনি, আমরা খুব নিশ্চিন্তভাবে ঘুমাই আর ঘুম থেকে উঠি| কল্পনা করুন একবার গাজার(ফিলিস্তিন) কথা, অথবা ইরাকের কথা? যেখানে তারা জানেনা কাল সকালের সূর্য দেখার সৌভাগ্য তাদের হবে কিনা; তারা জানেনা আজ রাতেই তাদের থাকার জায়গায় বিমানহামলা হবে কিনা, জানেনা কখন ঘাতক বুলেট এসে প্রাণ নিয়ে যাবে, তারা জানেনা কবে এই অত্যাচার, এই জুলুম থামবে| যদি বাহ্যিক নিরাপত্তা না থাকতো তাহলে কি হত তা আসলে কল্পনা করে বোঝানো সম্ভব না যদি সত্যিই তাদের জন্য না ভাবেন| আর আল্লাহতায়ালা আমাদের এত নিরাপদে রেখেছেন, এতো আরামে রেখেছেন যে আমরা তাঁকে ধন্যবাদ দিতেও ভুলে যাই, মনে করি এসব তো আমাদের প্রাপ্য ছিল|






হায়া [حياء]






এখন আরেকটি আবেগ নিয়ে কথা বলবো, সেটা হল-হায়া, অথবা দুর্বল অনুবাদ হিসেবে বলা যেতে পারে লজ্জাবোধ| নামাজে এই বোধটাকে আমাদের মাঝে নিয়ে আসা উচিত| এখন প্রশ্ন করা যেতে পারে-আল্লাহ্তায়ালার কাছে লজ্জা পাওয়ার কি আছে? এ প্রশ্নের উত্তর হল কারণ আল্লাহ আমাদের উপর ধৈর্যধারণ করে আছেন| আমরা যা করি তারপরও ধৈর্যধারণ করা শুধু তাঁর পক্ষেই সম্ভব| তিনি আমাদের হাত, পা, চোখ, নাক, মুখ সহ সবকিছু দান করেছেন, কিন্তু আমরা সেসব দিয়েই তাঁর অবাধ্যতা করি, পাপ কাজ করি, সীমালংঘন করি; তারপরও তিনি ধৈর্য ধরেন, সবার সামনে উন্মোচিত না করে আমাদের দোষগুলোকে তিঁনি গোপন রাখেন, আবার তৎক্ষনাত শাস্তিও দেন না| এ সবের পরেও, তিনি আমাদের তাওবা কবুল করেন; শুধু তাইই নয়, তিঁনি তাঁর বান্দার কোন আবদার ফিরিয়ে দিতেও লজ্জা বোধ করেন, যখনই বান্দা তাঁর কাছে কিছু চায় তিনি তা দিয়ে দেন অথবা জান্নাতে তার জন্য আরো বেশী কিছু নির্ধারণ করে রাখেন, যা নবী(সা:) বলে গেছেন| তাহলে আমরা কি লজ্জিত না হয়ে তাঁর সামনে নামাজে দাঁড়াতে পারি?






আল্লাহ আমাদের নামাজ কে নিখুঁত ভাবে আদায় করার তৌফিক দান করুন| আমীন|






[চলবে....(ইনশা-আল্লাহ)]

কিভাবে নামাজের মাধূর্য আস্বাদন করা যায়? পর্ব ৫

ভালোবাসা










আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা যত বেশী হবে, নামাজে খুশুও তত বাড়তে থাকবে| যখন অনেক পছন্দের মানুষের সাথে দেখা হয় তখনকার অনুভূতি আর সাধারণ মানুষের সাথে দেখা হওয়ার অনুভূতির বিস্তর ফারাক আছে|






আগের লেখাতে আমরা উল্লেখ করেছি যে, কারো প্রতি ভালোবাসা মূলত তার সৌন্দর্য, গুনাবলী এবং তার করা সাহায্য থেকে সৃষ্টি হয়; এবং আল্লাহতায়ালা এই তিনটি ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত| আমরা তার সৌন্দর্যের কথা তো আগেই বলেছি; কিন্তু তাঁর গুনাবলী কি কি? কিংবা তিনি আমাদের জন্যে কিই বা করেছেন? আমরা জানি একটা মানুষের চরিত্র বা তাঁর দোষ-গুন আমাদের সামনে আসে যখন আমরা তাদের সাথে চলাফেরা করি, তাদের সাথে মিশি| তাহলে আমরা আল-হালীম(সবচেয়ে বড় ধৈর্যধারণকারী), আর-রহীম(পরম করুনাময়) আল-কারীম(যিনি উদারতায় সর্বশ্রেষ্ঠ) আল-ওয়াদুদ(যিনি সবার চেয়ে বেশি ভালোবাসেন) সম্পর্কে কি জানি আর কি বলতে পারি?






আল্লাহর সাথে সম্পর্ক:






ইবনে আল-কায়য়িম বলেন আমরা তাঁর করুনা সম্পর্কে একটা ধারণা করতে পারি যখন তিঁনি তার বান্দাদের সাথে অতি মধুর সুরে কথা বলেন| যখন তিনি সীমালংঘনকারীদের উদ্দেশ্যে কথা বলেন তখন তিঁনি বলেন না যে “ওহে পাপিষ্ঠ!” বরং তিঁনি বলেন:






۞ قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَىٰ أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا ۚ إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ [٣٩:٥٣]






“হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু|” [আল-জুমার ৩৯:৫৩]






খেয়াল করুন কিভাবে মহান আল্লাহতায়ালা কিভাবে আমাদের সাথে কথা বলছেন| তিঁনি আমাদের চোখ দিয়েছেন, নাক দিয়েছেন, কান দিয়েছেন, মুখ সহ অন্য সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দিয়েছেন; তারপর আমরা সেগুলো দিয়েই তাঁর আদেশ অমান্য করে চলেছি, তারপরও তিনি আমাদের শাস্তি দিচ্ছেন না; বরং তিনি ধৈর্যধারণ করে আমাদের তাঁর দিকে ফিরে আসার সুযোগ দিয়ে চলেছেন| আবার যখন আমরা তাঁর কাছে হাত তুলে তাওবা করি, ক্ষমা প্রার্থনা করি তিঁনি আমাদের সকল পাপ এমনভাবে মুছে দেন যে তা হয়তো কখনো করাই হয়নি|






একবার ভেবে দেখুন কিভাবে আল্লাহতায়ালা আমাদের কতবার কত বড় বড় বিপদ থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন| এমন কতো সময় গেছে যে আপনি ভেবেছেন কত বড় সর্বনাশই না হয়ে গেলো, আল্লাহর কাছে কতইনা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অথচ পরে সবকিছুর পরিনাম দেখে বলেছেন “হায় আল্লাহ, সকল প্রশংসা তোমারই, তুমি যা করেছিলে তা ভালোর জন্যই করেছিলে|” কল্পনা করুনতো যে কেউ আপনাকে একটা উপহার দিলো, আপনার তা পছন্দ হলনা এবং আপনার আচরণেই তা তাকে বুঝিয়ে দিলেন যে আপনার এই ফালতু উপহার মোটেও পছন্দ হয়নি| আর পরে যখন তা আপনার উপকারে আসলো আপনি তার কাছে গেলেন আর হাত ধরে বললেন, “অনেক অনেক ধন্যবাদ, তোমার উপহারের জন্য আজ বেঁচে গেলাম|”






ইবনে আল-কায়য়িম বলেন, “আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে অনেক সাবধানী, কিন্তু তাঁর বান্দা তাঁর সামনে একটুকুও লজ্জ্বা বোধ করেন না|” আল্লাহ হাজার হাজার নবী রাসূল পাঠিয়েছেন যাতে আমরা সরলপথে তাঁর দিকে চলতে পারি, তিঁনি নিজে প্রতি রাতের শেষ এক-তৃতীয়াংশে সর্বনিম্ন আসমানে নেমে এসে জিগ্যেস করেন কেউ কি আছে যে কিছু চায়? কেউ আছে যে তাওবা করবে? আর তিঁনি তাকে মাফ করে দিবেন| আর এসব কিছুই তিনি করেন শুধু আমাদের জন্য, আমরা না থাকলেও তাঁর কিছু যায় আসে না| আমাদেরই তাঁর কাছে সকল চাহিদা, সকল প্রার্থনা, তারপরও আমরা তাঁর সকল অনুগ্রহকে উপেক্ষা করতে লজ্জাবোধ করিনা|






আল্লাহতায়ালাকে জানা এবং চেনা:






ইবনে আল-কায়য়িম বলেন যে, তুমি যদি আল্লাহতায়ালকে জানো, তাকে তুমি ভালোবাসে ফেলবেই| যিনি আপনার দূ’আ কবুল করেন, যিনি আপনাকে প্রতিটা কাজের জন্যে পুরস্কৃত করেন, যিনি ক্ষমা করে দেন, যিনি আমাদের দোষ-ত্রুটি গোপন করে রাখেন, যিনি আমাদেরকে আমাদের মায়ের চাইতেও অধিক ভালোবাবাসেন তাকে কি ভালো না বেসে পারা যায়?






youtube এর একটি ভিডিও ক্লিপ( http://www.youtube.com/watch?v=btuxO-C2IzE ৮ MB) আছে দেখে আসতে পারেন| এটা কোন মুভির দৃশ্য নয়, বরং সত্যি ঘটনা| দুজন ব্রিটিশ ব্যক্তি একটা সিংহ শাবককে ছোট থেকে বড় করেন, বড় হয়ে যাবার পর তারা সিংহটিকে লোকালয়ে রাখতে না পেরে তাকে আফ্রিকার বনে রেখে আসে| এক বছর পর সিংহটাকে তাদের খুব দেখতে ইচ্ছা হলে তারা আবার সেখানে ফিরে যায়; তাদের কে বলা হয়েছিল যে এতদিন বন্য পরিবেশে থেকে সিংহটা খুব হিংস্র হয়ে গেছে; কিন্তু সুবহান-আল্লাহ(সকল গৌরব, অহংকার ও মহিমা আল্লাহর) অনেক খোঁজাখুজির পেয়ে যখন তারা সিংহটির কাছে গেলো; তখন সে তাদের সাথে কি আচরণ করলো তা না দেখলে বর্ণনা করে বোঝানো সম্ভব না; এমনকি সিংহটি তার সিংহীকেও তাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়|






এই সম্পর্ক কিছুটা হলেও ভাবিয়ে তোলে যে আল্লাহতায়ালার সাথে আমাদের কি রকম সম্পর্ক হওয়া উচিত| প্রতিদিন ঘুমের সময় নিজের রুহকে আল্লাহ তায়ালার কাছে সঁপে দেই আমরা, তিঁনি যদি তা ফিরিয়ে না দিতেন তবে কি আমরা কেউ কিছু করতে পারতাম? প্রতিদিন তিনি আমাদেরকে আলো বাতাস পানি দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন, প্রতিদিন আমাদের রিজিক এর সুব্যবস্থা করে দিচ্ছেন; আবার যখন সীমালংঘন করছি, পাপ কাজ করছি, তাওবা করার সাথে সাথে মাফ করে দিচ্ছেন| আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন:






هَلْ جَزَاءُ الْإِحْسَانِ إِلَّا الْإِحْسَانُ [٥٥:٦٠]






সৎকাজের প্রতিদান উত্তম পুরস্কার ব্যতীত আর কি হতে পারে? [আর রাহমান ৫৫:৬০]






একটা বন্য ও হিংস্র প্রাণী যদি তাকে কিছুদিনের জন্য দেখভাল করায় এতটা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারে; তাহলে আমাদের আল্লাহতায়ালার প্রতি কি পরিমান কৃতজ্ঞ আর অনুগত হওয়া উচিত? নামাজে ঠিক সেই পরিমান বিনীত হয়ে দাড়ানো উচিত আমাদের| আল্লাহ তায়ালা বলেন:






وَكَانُوا لَنَا خَاشِعِينَ [٢١:٩٠]






এবং তারা ছিল আমার কাছে বিনীত। [আল-আম্বিয়া ২১:৯০]
















এখন যদি আপনি প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে চান, তাহলে আগে ঠিক জায়গায় যোগাযোগ করে সময় নির্ধারণ করতে হবে, যদি তিনি আপনার সাথে দেখা করতে রাজি হোন তবেই তার সাথে কথা বলতে পারবেন; এবং এর পরও যদি আপনি তার কাছে কিছু চান তা সে যাই হোক না কেন, তিনি রাজি হতেও পারেন নাও হতে পারেন| যদি আপনার দাবি পূরণ হয় তাহলে আপনি তার কাছে খুবই কৃতজ্ঞ হবেন, সবার কাছে তার সুনাম করে বেড়াবেন|






কিন্তু যে আল্লাহ না চাইতেই আপনার এত কিছু দিচ্ছেন, এত পাপ করার পরও আপনাকে শাস্তি দিচ্ছেন না, আবার ক্ষমা চাইলে মাফও করে দিচ্ছেন, শুধু তাই না পরকালে আবার জান্নাত দান করবেন বলে রাখছেন, সেই মহান আল্লাহতায়ালার কাছে যখন ‘আল্লাহু আকবার’ বলে দাড়াচ্ছেন তখন আপনি কতটা কৃতজ্ঞতা আর মুগ্ধতা নিয়ে দাড়াচ্ছেন?






[চলবে.....(ইনশা-আল্লাহ)]

কিভাবে নামাজের মাধূর্য আস্বাদন করা যায়?পর্ব ৪

আবেগ-অনভূতির সর্বোচ্চ শিখর:






আজ আমরা আরো গভীরে প্রবেশ করব; এখন পর্যন্ত আমরা একাগ্র হয়েছি, যা উচ্চারণ করি তা অর্থ বুঝে করি, এবং দুই ধরনের আবেগ নিয়ে নামাজে আল্লাহর সামনে দাঁড়াই, আর আজকে আরো এক ধরনের আবেগ নিয়ে কথা বলবো|এই আবেগ নিয়ে নামাজে দাড়ালে আমাদের নামাজকে খুব কম সময়ের নামাজ বলে মনে হবে, কিন্তু নামাজ শেষ করে ঘড়ি দেখলে মনে হবে, “আরে! এত তারাতারি ১০ মিনিট পার হয়ে গেছে?” কিংবা ১৫ মিনিট বা ২০ মিনিট(ইনশা-আল্লাহ)| যে ব্যক্তি নামাজে এই আবেগটা প্রয়োগ করতে শুরু করবে তার ইচ্ছা হবে এই নামাজ যেনো কখনো শেষ না হয়|এটি এমন একটি আবেগ যা সম্পর্কে ইবনে কায়য়্যিম বলেন, “যার জন্যে প্রতিযোগীরা প্রতিযোগিতা করে....এটা হল আত্মার জন্য পুষ্টি আর চোখের জন্য শীতলতা|” তিনি আরো বলেন, “যদি হৃদয় থেকে এই অনুভুতি বের হয়ে যায়, এটা অনেকটা এমন যেমন প্রাণ ছাড়া শরীর|”


এই আবেগ কোনটি জানেন?






ভালোবাসা(الحب)






কিছু কিছু মানুষের আল্লাহর সাথে সম্পর্ক শুধু তাঁর আদেশ আর নিষেধ এর মাঝেই সীমাবদ্ধ, যাতে সে জাহান্নাম থেকে বাঁচা যায়| অবশ্যই আমাদের আদেশ, নিষেধ মেনে চলতে হবে, কিন্তু এটা শুধু ভয় আর আশা নিয়ে নয়, বরং আল্লাহ তায়ালার প্রতি পরম ভক্তি ও ভালোবাসা নিয়ে করতে হবে| আল্লাহতায়ালা কোরআনে বলেন:






‘.....অচিরে আল্লাহ এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে|’ [আল মাঈদা ৫:৫৪]






সচারচর দেখা যায় যখন মানুষ তার পছন্দের মানুষের কাছে আসে, হৃদয়ে চাঞ্চল্যতা আসে, আন্তরিকতা আসে| কিন্তু আল্লাহর সাথে দেখা করার সময়, নামাজে আমরা বিন্দুমাত্রও এই আবেগ অনুভব করিনা| আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন:






وَمِنَ النَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ اللَّهِ أَندَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ ۖ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِّلَّهِ ۗ وَلَوْ يَرَى الَّذِينَ ظَلَمُوا إِذْ يَرَوْنَ الْعَذَابَ أَنَّ الْقُوَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًا وَأَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعَذَابِ [٢:١٦٥]






“আর কোন লোক এমনও রয়েছে যারা অন্যান্যকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি ঈমানদার তাদের ভালবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশী|” [সুরা বাকারা ২:১৬৫]






কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি ঈমানদার তাদের ভালবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশী| যখন আমরা নামাজের জন্য হাত উপরে তুলি তখন সেখানে আল্লাহর জন্য আকুলতা থাকা উচিত, ভালোবাসা ও আন্তরিকতায় আমাদের হৃদয় পূর্ণ থাকা উচিত কারণ আমরা এখন আল্লাহর সাথে মিলিত হতে যাচ্ছি|






নবী(সা:) এর একটি দূ’আ আছে:






اللهم إني أسألك الشوق الى لقائك






“ইয়া আল্লাহ, তোমার সাথে মিলিত হবার আকুলতা আমার হৃদয়ে স্থাপন করে দাও|”( নাসাঈ, হাকিম)






ইবনে আল কায়য়িম তাঁর ‘তারিখ আল-হিজরাতাঈন’ নামক বইতে বলেন আল্লাহতায়ালা তাঁর রাসুলদের এবং তাঁর মুমিন বান্দাদের ভালোবাসেন, এবং রাসূলগণ এবং মুমিনরাও তাঁকে ভালোবাসেন এবং তাদের কাছে আল্লাহতায়ালার চেয়ে বেশী প্রিয় আর কিছু নেই| পিতামাতার প্রতি ভালোবাসার মাধুর্য এক ধরনের, সন্তানের প্রতি ভালোবাসাও আরেক রকম, কিন্তু আল্লাহ তায়ালার প্রতি ভালোবাসা অন্যসব কিছুর তুলনায় বেশী মাধুর্যময়| নবী(সা:) বলেছেন:


“ যে ব্যক্তি তিনটি গুনকে একত্রে সংযুক্ত করতে পারবে সে ঈমানের প্রকৃত মজা পাবে...”


প্রথম যে জিনিসটি তিনি(সা:) উল্লেখ করেন সেটা হল যে: “..আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তার কাছে সবকিছুর চেয়ে বেশী প্রিয় হতে হবে...”


ইবনে আল-কায়য়িম বলেন, “যেহেতু ‘কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়’[সুরা আস-শুরা ৪২:১১] সেহেতু তাকে ভালোবাসার অনুরূপও আর কিছুই হতে পারেনা|”যদি আপনি এই ভালোবাসার গভীরতা ও মাধূর্য একবার অনুভব করতে পারেন, তাহলে আপনার আর নামাজ ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করবে না|






আমি এই ভালোবাসা অনুভব করতে চাই; কিন্তু কিভাবে?






আপনি কি সত্যিই এই ভালোবাসা অনুভব করতে চান? তাহলে নিজেকেই জিগ্যেস করুন- কেন আপনি আল্লাহকে ভালোবাসতে চান? কারণ এটা জেনে রাখেন যে মানুষ মূলত ভালোবাসে তিনটি কারণের যেকোনো একটির(অথবা কমবেশি মাত্রায় তিনটির জন্যই) জন্য:






১. তাদের সৌন্দর্যের জন্য;


২. তাদের মান-সম্মান বা উচ্চমর্যাদার জন্য;


৩. অথবা তারা আপনার জন্য ভালো কিছু করেছে এই জন্য;






আরও এটা জেনে রাখেন যে আল্লাহতায়ালা এই তিনটি গুনেই অন্য সবার চেয়ে অনেক অনেক উপরে|






১. সৌন্দর্য






সৌন্দর্য সবসময়ই আমাদের হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়| এটা অনেকটা আমাদের ফিতরাত(যা প্রাকৃতিকভাবে থাকে)এর মতো| আলী ইবনে আবি তালিব (রাদি-আল্লাহু আনহু) নবী(সা:)সম্পর্কে বলেন যে “তাকে দেখে মনে হত তাঁর মুখ থেকে সূর্যের কিরণ বের হচ্ছে|” জাবির(রা:) বলেন: “রাসূলুল্লাহ(সা:) পূর্নিমার চাঁদের চেয়েও সুশ্রী, সুন্দর এবং উজ্জ্বল ছিলেন|” (তিরমিজী) আল্লাহতায়ালা তাঁর সকল নবী রাসূলগনকে অসাধারণ সৌন্দর্য দান করেছিলেন যাতে মানুষ তাঁদের প্রতি প্রাকৃতিকভাবেই আকৃষ্ট হয়|






আর সৌন্দর্য শুধু মানুষের মুখের মাঝেই সীমাবদ্ধ না, সৌন্দর্য সকল সৃষ্টিজগতের মাঝেই ছড়িয়ে রয়েছে এবং প্রায়ই তা আমাদের মুগ্ধ করে, আমাদের করে বাকহারা এবং সাথে সাথে আমাদের দেয় এক স্বর্গীয় শান্তির অনুভুতি| পূর্ণিমা রাতের শান্ত চাঁদের আলো, পাহাড় বয়ে নেমে আসা স্বচ্ছ পানির ঝর্না, কিংবা সমুদ্র পাড়ের রক্তিম সূর্যাস্ত...ইত্যাদির সামনে এলে কেমন যেনো একটা গভীর অনুভুতি আমাদের মাঝে বয়ে যায় যা খুবই পবিত্র, আমাদের করে তোলে মোহিত, মুগ্ধ| আজকাল শহরের যান্ত্রিকতা আর রুক্ষতা অবশ্য আমাদের এই পবিত্র অনুভুতি গুলোকে মলিন করে দিয়েছে...তবুও চলুন youtubeএ দেখে আসি এরকম একটা সুন্দর জায়গা|






http://www.youtube.com/watch?v=nUPeP-mVQJU






আর আল্লাহতায়ালা হলেন সেই সত্তা যিনি এইসব সৌন্দর্যকে সৃষ্টি করেছেন, সাজিয়েছেন, সৌন্দর্যমন্ডিত করেছেন| তাহলে আল্লাহর নিজের সৌন্দর্য কোন পর্যায়ের হতে পারে? ইবনে আল-কায়য়িম বলেন, “আর আল্লাহতায়ালার সৌন্দর্য উপলব্ধি করার জন্যে এটা জানা থাকাই যথেষ্ঠ যে এই জীবন এবং এর পরের জীবনের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সকল সৌন্দর্য তাঁরই সৃষ্টি, তাহলে তাদের সৃষ্টিকর্তা কতটা সুন্দর হতে পারেন?”






আল্লাহতায়ালা সুন্দর জন্যেই সৌন্দর্যের জন্য আমাদের ফিতরাত| আল্লাহতায়ালার একটি নাম হল আল-জামীল(যিনি সবচেয়ে সুন্দর)| ইবনে আল-কায়য়্যিম বলেন আল্লাহ তায়ালার সৌন্দর্য এমন যে কেউ শুধু তা জেনে রাখতে পারেন, তা কল্পনা করার ক্ষমতা কারোরই নেই| এই মহাজগতের সকল সৌন্দর্য একত্রেও তাঁর নিজের সৌন্দর্যের এক বিন্দুও নয়| ইবনে আল-কায়য়িম বলেন সুর্য কিরণের যেমন সূর্যের সাথে তুলনা হয় না, ঠিক তেমন যদি সময় সৃষ্টির শুরু থেকে কেয়ামতের আগ পর্যন্ত সকল কিছুর সৌন্দর্য একত্র করা হয়, তবুও তা আল্লাহর সৌন্দর্যের সাথে তুলনা করারো যোগ্য হবে না| আল্লাহতায়ালা এত প্রবল সৌন্দর্যের অধিকারী যে এই জগতে আমাদের তা সহ্য করার ক্ষমতা নেই| পবিত্র কোরআনে, আল্লাহ তায়ালা মুসা(আ:)এর অনুরোধ বর্ণনা করেন:






وَلَمَّا جَاءَ مُوسَىٰ لِمِيقَاتِنَا وَكَلَّمَهُ رَبُّهُ قَالَ رَبِّ أَرِنِي أَنظُرْ إِلَيْكَ ۚ قَالَ لَن تَرَانِي وَلَٰكِنِ انظُرْ إِلَى الْجَبَلِ فَإِنِ اسْتَقَرَّ مَكَانَهُ فَسَوْفَ تَرَانِي ۚ فَلَمَّا تَجَلَّىٰ رَبُّهُ لِلْجَبَلِ جَعَلَهُ دَكًّا وَخَرَّ مُوسَىٰ صَعِقًا ۚ فَلَمَّا أَفَاقَ قَالَ سُبْحَانَكَ تُبْتُ إِلَيْكَ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُؤْمِنِينَ [٧:١٤٣]






“তারপর মূসা যখন আমার প্রতিশ্রুত সময় অনুযায়ী এসে হাযির হলেন এবং তাঁর সাথে তার পরওয়ারদেগার কথা বললেন, তখন তিনি বললেন, হে আমার প্রভু, তোমার দীদার আমাকে দাও, যেন আমি তোমাকে দেখতে পাই। তিনি বললেন, ‘তুমি আমাকে দেখতে পাবে না, তবে তুমি পাহাড়ের দিকে দেখতে থাক, সেটি যদি স্বস্থানে দঁড়িয়ে থাকে তবে তুমিও আমাকে দেখতে পাবে|’ তারপর যখন তার পরওয়ারদগার পাহাড়ের উপর আপন জ্যোতির বিকিরণ ঘটালেন, সেটিকে বিধ্বস্ত করে দিলেন এবং মূসা অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন...|” [আল আরাফ ৭:১৪৩]






পাথরের পাহাড়ও আল্লাহর সৌন্দর্যের সামান্য জ্যোতি বহন করতে পারেনি এবং বিধ্বস্ত হয়ে গেছে, এবং এই ঘটনা দেখে মুসা(আ:) জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন| এ কারণেই হাশরের ময়দানে সবকিছু আল্লাহর সৌন্দর্যে দীপ্তিময় হয়ে উঠবে| আমরা শুধু তাঁর সৌন্দর্যের কথা আলোচনাই করতে পাড়ি কিন্তু তা অবলোকন করা আমাদের আয়ত্তের বাহিরে| এই বিশ্বজগতের এত সুন্দর, এত মোহনীয় সব জায়গা, জিনিস, মানুষ অথবা তাদের সবার সৌন্দর্য একত্রেও একটি নির্দিষ্ট গন্ডির মাঝেই সীমাবদ্ধ; আসল মহিমা আর সৌন্দর্যতো আল্লাহতায়ালার| আল্লাহতায়ালা বলেন:






وَيَبْقَىٰ وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ






আর তখন শুধু বাকি রয়ে যাবে আপনার রবের মহিমা এবং সম্মান|[আর রাহমান ৫৫:২৭]






এসব কিছু ভেবেই, মহানবী(সা:) বলেছেন:






إن الله ينصب وجهه لوجه عبده في صلاته ما لم يلتفت






বান্দা যখন নামাজে দাঁড়ায় আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দার দিকে তাকান এবং যতক্ষণ সে নামাজে থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি তাঁর মুখ ফেরান না| (তিরমিজী)






নামাজে দাঁড়িয়ে এই কথা মাথায় রাখবেন, এবং প্রার্থনা করবেন যেন আল্লাহ আপনাকে জান্নাতে তাঁকে দেখার সুযোগ দেন|






এই ভালোবাসাকে কি আরও উপরে নিয়ে যেতে চান? তাহলে সাথেই থাকুন|






[চলবে.....(ইনশা-আল্লাহ)]