যে চৌদ্দ আমলে রিজিক বাড়ে
মুসলিম মাত্রেই বিশ্বাস
করেন যে তার আয় ও উপার্জন, জীবন ও মৃত্যু,
এবং সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য ইত্যাদি র্নিধারণ হয়ে যায় যখন তিনি মায়ের উদরে থাকেন। আর এসব তিনি লাভ করেন তার জন্য বরাদ্দ উপায়-উপকরণগুলোর
মাধ্যমে। তাই আমাদের কর্তব্য হলো হাত গুটিয়ে বসে না থেকে এর জন্য র্নিধারিত
উপায়-উপকরণ সংগ্রহে চেষ্টা করা। যেমন চাষাবাদ, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্প-চারু, চাকরি-বাকরি
বা অন্য কিছু। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿هُوَ ٱلَّذِي جَعَلَ لَكُمُ ٱلۡأَرۡضَ
ذَلُولٗا فَٱمۡشُواْ فِي مَنَاكِبِهَا وَكُلُواْ مِن رِّزۡقِهِۦۖ وَإِلَيۡهِ ٱلنُّشُورُ
١٥﴾ [الملك: ١٥]
‘তিনিই তো তোমাদের জন্য যমীনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথেÑপ্রান্তরে বিচরণ কর
এবং তাঁর রিযক থেকে তোমরা আহার কর। আর তাঁর নিকটই পুনরুত্থান।’ {সূরা আল-মুলক, আয়াত :
১৫}
আজ আমরা রিজিক বৃদ্ধির উপায়সমূহের
মধ্যে কুরআন ও হাদীস রোমন্থিত ১৪টি আমলের কথা আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
প্রথম আমল : তাকওয়া ও
তাওয়াক্কুল অবলম্বন করা
আল্লাহর ভয় তথা তাকওয়া
অবলম্বন করা, তাঁর নির্দেশাবলি পালন ও নিষিদ্ধ বিষয়গুলো বর্জন করা। পাশাপাশি
আল্লাহর ওপর অটল আস্থা রাখা, তাওয়াক্কুল করা এবং রিজিক তালাশে তাঁর সাহায্য
প্রার্থনা করা। কারণ, যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। আল্লাহ
তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢ وَيَرۡزُقۡهُ
مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ وَمَن يَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱللَّهِ فَهُوَ حَسۡبُهُۥٓۚ إِنَّ
ٱللَّهَ بَٰلِغُ أَمۡرِهِۦۚ قَدۡ جَعَلَ ٱللَّهُ لِكُلِّ شَيۡءٖ قَدۡرٗا ٣ ﴾ [الطلاق : ٢، ٣]
‘আর যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। এবং তিনি
তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর
যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ
করবেনই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।’
{সূরা
আত-তালাক, আয়াত : ২-৩}
অর্থাৎ যে আল্লাহকে ভয়
করবে এবং আনুগত্য দেখাবে, আল্লাহ তার সকল সংকট দূর করে দেবেন এবং তার কল্পনাতীত
স্থান থেকে রিজিকের সংস্থান করে দেবেন। আর যে কেউ তার উদ্দেশ্য হাসিলে একমাত্র
আল্লাহর শরণাপন্ন হয় তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। বলাবাহুল্য এই তাকওয়ার পরিচয়
মেলে হালাল উপার্জনে চেষ্টা এবং সন্দেহযুক্ত কামাই বর্জনের মধ্য দিয়ে।
দ্বিতীয় আমল : তাওবা ও ইস্তেগফার
করা
অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার
এবং বেশি বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেও রিজিক বাড়ে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর
অন্যতম নবী ও রাসূল নূহ আলাইহিস সালামের ঘটনা তুলে ধরে ইরশাদ করেন,
﴿ فَقُلۡتُ ٱسۡتَغۡفِرُواْ رَبَّكُمۡ إِنَّهُۥ
كَانَ غَفَّارٗا ١٠ يُرۡسِلِ ٱلسَّمَآءَ عَلَيۡكُم مِّدۡرَارٗا ١١ وَيُمۡدِدۡكُم بِأَمۡوَٰلٖ
وَبَنِينَ وَيَجۡعَل لَّكُمۡ جَنَّٰتٖ وَيَجۡعَل لَّكُمۡ أَنۡهَٰرٗا ١٢ ﴾ [نوح:
١٠، ١٢]
‘আর বলেছি, ‘তোমাদের রবের কাছে
ক্ষমা চাও; নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল’। (তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলে) ‘তিনি তোমাদের উপর মুষলধারে
বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, ‘আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান- সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য
বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা’। {সূরা নূহ, আয়াত : ১০-১২}
হাদীসে বিষয়টি আরেকটু
খোলাসা করে বলা হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« مَنْ لَزِمَ الاِسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ ضِيقٍ
مَخْرَجًا وَمِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِبُ ».
‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার
করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে
দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন।’ [আবূ দাঊদ : ১৫২০;
ইবন মাজা : ৩৮১৯; তাবরানী : ৬২৯১][1]
অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« مَنْ أَكْثَرَ الِاسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ هَمٍّ
فَرَجًا وَمِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِبُ».
‘যে ব্যক্তি বেশি বেশি
ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা
মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ [বাইহাকী :
৬৩৬; হাকেম, মুস্তাদরাক : ৭৬৭৭ সহীহ সূত্রে বর্ণিত।]
তৃতীয় আমল : আত্মীয়দের
সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা
আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক
বজায় রাখা এবং তাদের হক আদায়ের মাধ্যমেও রিজিক বাড়ে। যেমন : আনাস ইবন মালেক
রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি ইরশাদ করেন,
« مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُبْسَطَ لَهُ
فِي رِزْقِهِ أَوْ يُنْسَأَ لَهُ فِي أَثَرِهِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ».
‘যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিজিক
প্রশস্ত করে দেওয়া হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘ করা হোক সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।’ [বুখারী
: ৫৯৮৫; মুসলিম : ৪৬৩৯]
চতৃর্থ আমল : নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরূদ পড়া
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরূদ পাঠেও রিজিকে প্রশস্ততা আসে। যেমনটি অনুমিত হয়
নিম্নোক্ত হাদীস থেকে। তোফায়েল ইবন উবাই ইবন কা‘ব রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত,
তিনি বলেন,
قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ
إِنِّى أُكْثِرُ الصَّلاَةَ عَلَيْكَ فَكَمْ أَجْعَلُ لَكَ مِنْ صَلاَتِى فَقَالَ «
مَا شِئْتَ ». قَالَ قُلْتُ الرُّبُعَ. قَالَ « مَا شِئْتَ فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ
لَكَ ». قُلْتُ النِّصْفَ. قَالَ « مَا شِئْتَ فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ ».
قَالَ قُلْتُ فَالثُّلُثَيْنِ. قَالَ « مَا شِئْتَ فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ
». قُلْتُ أَجْعَلُ لَكَ صَلاَتِى كُلَّهَا. قَالَ « إِذًا تُكْفَى هَمَّكَ وَيُغْفَرُ
لَكَ ذَنْبُكَ ». قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ.
আমি
জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমি আপনার প্রতি অধিকহারে দরূদ পড়তে চাই, অতএব
আমার দু‘আর মধ্যে আপনার দরূদের জন্য কতটুকু অংশ রাখব? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু
চাও। কা‘ব বলেন, আমি বললাম, এক চতুর্থাংশ। তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। তবে যদি
তুমি বেশি পড় তা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি বললাম, অর্ধেক? তিনি বললেন, তুমি
যতটুকু চাও। তবে তুমি যদি বেশি পড় তা তোমার জন্য উত্তম হবে। কা‘ব বলেন, আমি বললাম,
তাহলে দুই তৃতীয়াংশ? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। তবে তুমি যদি বেশি পড় তা তোমার
জন্য উত্তম হবে। আমি বললাম, আমার দু‘আর পুরোটা জুড়েই শুধু আপনার দরূদ রাখব। তিনি
বললেন, তাহলে তা তোমার ঝামেলা ও প্রয়োজনের জন্য যথেষ্ট হবে এবং তোমার গুনাহ ক্ষমা
করা হবে। [তিরমিযী : ২৬৪৫; হাকেম, মুস্তাদরাক : ৭৬৭৭ (আবূ ঈসা বলেন, হাদীসটি ‘হাসান’
সহীহ।)]
পঞ্চম আমল : আল্লাহর
রাস্তায় ব্যয় করা
আল্লাহর রাস্তায় কেউ ব্যয়
বা দান করলে তা বিফলে যায় না। সে সম্পদ ফুরায়ও না। বরং তা
বাড়ে বৈ কি। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ قُلۡ إِنَّ رَبِّي يَبۡسُطُ ٱلرِّزۡقَ لِمَن يَشَآءُ مِنۡ
عِبَادِهِۦ وَيَقۡدِرُ لَهُۥۚ وَمَآ أَنفَقۡتُم مِّن شَيۡءٖ فَهُوَ يُخۡلِفُهُۥۖ وَهُوَ
خَيۡرُ ٱلرَّٰزِقِينَ ٣٩ ﴾ [سبا: ٣٩]
‘বল, ‘নিশ্চয় আমার রব
তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিযক প্রশস্ত করেন এবং সঙ্কুচিত করেন। আর তোমরা
যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় কর তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই উত্তম রিযকদাতা।’ {সূরা আস-সাবা’, আয়াত : ৩৯}
ষষ্ঠ আমল : বারবার
হজ-উমরা করা
হজ ও উমরা পাপ মোচনের পাশাপাশি
হজকারী ও উমরাকারীর অভাব-অনটন দূর করে এবং তার সম্পদ বাড়িয়ে দেয়। আবদুল্লাহ ইব্ন মাসঊদ
রাদিআল্লাহু আনহুমা কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« تَابِعُوا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ
الْفَقْرَ وَالذُّنُوبَ كَمَا يَنْفِى الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ
وَلَيْسَ لِلْحَجَّةِ الْمَبْرُورَةِ ثَوَابٌ إِلاَّ الْجَنَّةُ ».
‘তোমরা হজ ও উমরা পরপর করতে থাক, কেননা তা অভাব ও
গুনাহ দূর করে দেয়, যেমন দূর করে দেয় কামারের হাপর লোহা, সোনা ও রুপার ময়লাকে।’ [তিরমিযী : ৮১৫; নাসাঈ : ২৬৩১]
সপ্তম আমল : দুর্বলের
প্রতি সদয় হওয়া বা সদাচার করা
মুস‘আব ইবন সা‘দ রাদিআল্লাহু
আনহু যুদ্ধজয়ের পর মনে মনে কল্পনা করলেন, তিনি বোধ হয় তাঁর বীরত্ব ও শৌর্য-বীর্য
হেতু অন্যদের চেয়ে নিজেকে বেশি মর্যাদাবান। সেই প্রেক্ষিত রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
« هَلْ تُنْصَرُونَ وَتُرْزَقُونَ إِلاَّ
بِضُعَفَائِكُمْ » .
‘তোমাদের মধ্যে থাকা
দুর্বলদের কারণে কেবল তোমাদের সাহায্য করা হয় এবং রিজিক প্রদান করা হয়।’ [বুখারী :
২৮৯৬]
অষ্টম আমল : ইবাদতের জন্য ঝঞ্ঝাটমুক্ত
হওয়া
আল্লাহর ইবাদতের জন্য
ঝামেলামুক্ত হলে এর মাধ্যমেও অভাব দূর হয় এবং প্রাচুর্য লাভ হয়। যেমনটি বর্ণিত
হয়েছে আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَقُولُ يَا
ابْنَ آدَمَ تَفَرَّغْ لِعِبَادَتِى أَمْلأْ صَدْرَكَ غِنًى وَأَسُدَّ فَقْرَكَ وَإِلاَّ
تَفْعَلْ مَلأْتُ يَدَيْكَ شُغْلاً وَلَمْ أَسُدَّ فَقْرَكَ ».
‘আল্লাহ
তা‘আলা বলেন, হে আদম সন্তান, আমার ইবাদতের জন্য তুমি ঝামেলামুক্ত হও, আমি তোমার
অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেব এবং তোমার দারিদ্র ঘুচিয়ে দেব। আর যদি তা না কর,
তবে তোমার হাত ব্যস্ততায় ভরে দেব এবং তোমার অভাব দূর করব না।’ [তিরমিযী : ২৬৫৪; মুসনাদ
আহমদ : ৮৬৮১; ইবন মাজা : ৪১০৭]
নবম
আমল : আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করা
আল্লাহর
সন্তুষ্টির নিমিত্তে হিজরত তথা স্বদেশ ত্যাগ করলে এর মাধ্যমেও রিজিকে প্রশস্ততা
ঘটে। যেমনটি অনুধাবিত হয় নিচের আয়াত থেকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ۞وَمَن يُهَاجِرۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ يَجِدۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ
مُرَٰغَمٗا كَثِيرٗا وَسَعَةٗۚ وَمَن يَخۡرُجۡ مِنۢ بَيۡتِهِۦ مُهَاجِرًا إِلَى ٱللَّهِ
وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ يُدۡرِكۡهُ ٱلۡمَوۡتُ فَقَدۡ وَقَعَ أَجۡرُهُۥ عَلَى ٱللَّهِۗ وَكَانَ
ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ١٠٠ ﴾ [النساء : ١٠٠]
‘আর
যে আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করবে, সে যমীনে বহু
আশ্রয়ের জায়গা ও সচ্ছলতা পাবে। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে মুহাজির হয়ে
নিজ ঘর থেকে বের হয় তারপর তাকে মৃত্যু পেয়ে বসে, তাহলে তার
প্রতিদান আল্লাহর উপর অবধারিত হয়। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম
দয়ালু।’ {সূরা আন-নিসা, আয়াত : ১০০}
আয়াতের
ব্যাখ্যা আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস প্রমুখ সাহাবী রাদিআল্লাহু আনহুদ বলেন, স্বচ্ছলতা
অর্থ রিজিকে প্রশস্ততা।
দশম
আমল : আল্লাহর পথে জিহাদ
একমাত্র
আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের জিহাদেও সম্পদের ব্যপ্তি ঘটে। গনীমত বা যুদ্ধলব্ধ
সম্পদের মাধ্যমে সংসারে প্রাচুর্য আসে। যেমন ইবন উমর রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« وَجُعِلَ رِزْقِي تَحْتَ ظِلِّ رُمْحِي ».
‘আর আমার রিজিক রাখা হয়েছে
আমার বর্শার ছায়াতলে।’ [মুসনাদ আহমদ : ৫৬৬৭; বাইহাকী : ১১৫৪; শু‘আবুল ঈমান : ১৯৭৮৩]
একাদশ আমল : আল্লাহর
নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা
সাধারণভাবে আল্লাহ যে
রিজিক ও নিয়ামতরাজি দান করেছেন তার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া করা এবং তাঁর স্তুতি
গাওয়া। কারণ, শুকরিয়ার ফলে নেয়ামত বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ وَإِذۡ تَأَذَّنَ رَبُّكُمۡ لَئِن شَكَرۡتُمۡ
لَأَزِيدَنَّكُمۡۖ وَلَئِن كَفَرۡتُمۡ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٞ ٧ ﴾ [ابراهيم:
٧]
‘আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা
দিলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি
তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আযাব বড় কঠিন।’ {সূরা ইবরাহীম, আয়াত : ০৭}
আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা
শুকরিয়ার বদৌলতে নেয়ামত বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। আর বলাবাহুল্য আল্লাহর বাড়ানোর
কোনো সীমা-পরিসীমা নাই।
দ্বাদশ আমল : বিয়ে করা
আজকাল মানুষের দুনিয়ার
প্রাচুর্য ও বিলাসের প্রতি আসক্তি এত বেশি বেড়েছে, তারা প্রচুর অর্থ নেই এ যুক্তিতে
প্রয়োজন সত্ত্বেও বিয়ে বিলম্বিত করার পক্ষে রায় দেন। তাদের কাছে আশ্চর্য লাগতে
পারে এ কথা যে বিয়ের মাধ্যমেও মানুষের সংসারে প্রাচুর্য আসে। কারণ, সংসারে নতুন যে
কেউ যুক্ত হয়, সে তো তার জন্য বরাদ্দ রিজিক নিয়েই আসে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ وَأَنكِحُواْ ٱلۡأَيَٰمَىٰ مِنكُمۡ وَٱلصَّٰلِحِينَ مِنۡ
عِبَادِكُمۡ وَإِمَآئِكُمۡۚ إِن يَكُونُواْ فُقَرَآءَ يُغۡنِهِمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦۗ
وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٞ ٣٢ ﴾ [النور : ٣٢]
‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার
অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস দাসীদের বিবাহ দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ
অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী।’ {সূরা
আন-নূর, আয়াত : ৩২}
উমর ইবন খাত্তাব রাদিআল্লাহু
আনহুমা বলতেন, ওই ব্যক্তির ব্যাপার বিস্ময়কর যে বিয়ের মধ্যে প্রাচুর্য খোঁজে না।
কারণ স্বয়ং আল্লাহ বলেছেন, ‘তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত
করে দেবেন।’
ত্রয়োদশ আমল : অভাবের সময়
আল্লাহমুখী হওয়া এবং তার কাছে দু‘আ করা
রিজিক অর্জনে এবং অভাব
দূরীকরণে প্রয়োজন আল্লাহর কাছে দু‘আ করা। কারণ, তিনি প্রার্থনা কবুল করেন। আর আল্লাহ তা‘আলাই
রিজিকদাতা এবং তিনি অসীম ক্ষমতাবান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ
لَكُمۡۚ ﴾ [غافر: ٦٠]
‘আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের জন্য
সাড়া দেব।’ {সূরা আল-মু‘মিন, আয়াত : ৬০}
এ আয়াতে আল্লাহ দু‘আ করার
নির্দেশ দিয়েছেন আর তিনি তা কবুলের জিম্মাদারি নিয়েছেন। যাবৎ না তা কবুলে পথে কোনো
অন্তরায় না হয়। যেমন ওয়াজিব তরক করা,
হারাম কাজে জড়ানো, হারাম আহার গ্রহণ বা হারাপ পরিচ্ছদ পরা ইত্যাদি এবং কবুলকে
খানিক বিলম্বিতকরণ। আল্লাহর কাছে দু‘আয় বলা যেতে পারে,
‘হে রিজিকদাতা আমাকে রিজিক
দান করুন, আপনি সর্বোত্তম রিজিকদাতা। হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে পবিত্র সুপ্রশস্ত
রিজিক চাই। হে ওই সত্তা, দানের ঢল সত্ত্বেও যার ভাণ্ডারে কমতি হয় না। হে আল্লাহ,
আমাকে আপনি আপনার হালাল দিয়ে আপনার হারাম থেকে যথেষ্ট করে দিন আর আপনার দয়া দিয়ে
আপনি ছাড়া অন্যদের থেকে যথেষ্ট হয়ে যান। হে আল্লাহ আপনি আমাকে যে রিজিক দিয়েছেন তা
দিয়েই সন্তুষ্ট বানিয়ে দিন। আর যা আমাকে দিয়েছেন তাতে বরকত দিন।’
অভাবকালে মানুষের কাছে হাত
না পেতে আল্লাহর শরণাপন্ন হলে এবং তাঁর কাছেই প্রাচুর্য চাইলে অবশ্যই তার অভাব
মোচন হবে এবং রিজিক বাড়ানো হবে। আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« مَنْ نَزَلَتْ بِهِ فَاقَةٌ فَأَنْزَلَهَا
بِالنَّاسِ لَمْ تُسَدَّ فَاقَتُهُ وَمَنْ نَزَلَتْ بِهِ فَاقَةٌ فَأَنْزَلَهَا بِاللَّهِ
فَيُوشِكُ اللَّهُ لَهُ بِرِزْقٍ عَاجِلٍ أَوْ آجِلٍ ».
‘যে ব্যক্তি অভাবে পতিত
হয়, অতপর তা সে মানুষের কাছে সোপর্দ করে (অভাব দূরিকরণে মানুষের ওপর নির্ভরশীল হয়),
তার অভাব মোচন করা হয় না। পক্ষান্তরে যে অভাবে পতিত হয়ে এর প্রতিকারে আল্লাহর ওপর
নির্ভরশীল হয় তবে অনিতবিলম্বে আল্লাহ তাকে তরিৎ বা ধীর রিজিক
দেবেন। [তিরমিযী : ২৮৯৬; মুসনাদ আহমদ : ৪২১৮]
চতুর্দশ আমল : গুনাহ ত্যাগ
করা, আল্লাহর দীনের ওপর সদা অটল থাকা এবং নেকীর কাজ করে যাওয়া।
গুনাহ ত্যাগ করা, আল্লাহর
দীনের ওপর অটল থাকা এবং নেকীর কাজ করা- এসবের মাধ্যমেও রিজিকের রাস্তা প্রশস্ত হয়
যেমন পূর্বোক্ত আয়াতগুলো থেকে অনুমান করা যায়।
তবে সর্বোপরি আমাদের মনে
রাখতে হবে আমরা দুনিয়াতে চিরদিন থাকার জন্য আসি নি। তাই দুনিয়াকে প্রাধান্য না
দিয়ে উচিত হবে আখিরাতকে অগ্রাধিকার ও প্রাধান্য দেয়া। আমাদের এদেন অবস্থা দেখে আল্লাহ
তা‘আলা বলেন,
﴿ بَلۡ تُؤۡثِرُونَ ٱلۡحَيَوٰةَ ٱلدُّنۡيَا
١٦ وَٱلۡأٓخِرَةُ خَيۡرٞ وَأَبۡقَىٰٓ ١٧ ﴾ [الاعلى: ١٦، ١٧]
‘বরং তোমরা দুনিয়ার জীবনকে
প্রাধান্য দিচ্ছ। অথচ আখিরাত সর্বোত্তম ও স্থায়ী।’ {সূরা আল-আ‘লা, আয়াত : ১৬-১৭}
আর পরকালের মুক্তি ও
চিরশান্তিই যার প্রধান লক্ষ্য তার উচিত হবে রিজিকের জন্য হাহাকার না করে অল্পে
তুষ্ট হতে চেষ্টা করা। যেমন : হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন আ‘স
রাদিআল্লাহু আনহুম থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« قَدْ أَفْلَحَ مَنْ أَسْلَمَ وَرُزِقَ كَفَافًا وَقَنَّعَهُ اللَّهُ
بِمَا آتَاهُ ».
‘ওই
ব্যক্তি প্রকৃত সফল যে ইসলাম গ্রহণ করেছে আর তাকে জীবন ধারণে (অভাবও নয়; বিলাসও
নয়) পর্যাপ্ত পরিমাণ রিজিক দেয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তাতে তুষ্টও
করেছেন। [মুসলিম : ২৪৭৩; তিরমিযী : ২৩৪৮; আহমদ : ৬৫৭২]
পরিশেষে আল্লাহর কাছে
প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের এসব উপায়-উপকরণ যোগাড়
করে রিজিক তথা হালাল উপার্জনে উদ্যোগী ও সফল হবার তাওফীক দান করেন। তিনি যেন
আপনাদের রিজিক ও উপার্জনে প্রশস্ততা দান করেন। আমীন।
[1].
(শায়খ উসাইমীন বলেন, সনদগত দিক থেকে হাদীসটি দুর্বল কিন্তু এর মর্ম ও বক্তব্য সহীহ
বা সঠিক। কুরআনের আয়াত ও হাদীসে এই বক্তব্যের সমর্থন বিদ্যমান। এই হাদীস সম্পর্কে
বিস্তারিত আলোচনার পর শায়খ বিন বায বলেন, সর্বোপরি হাদীসটি তারগীব ও তারহীব তথা
মানুষকে আখিরাতের আগ্রহ বা ভয় দেখানোর ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য। কারণ, এ ব্যাপারে
কুরআন ও সুন্নাহে একাধিক বক্তব্য পাওয়া যায়। [ফাতাওয়া নূর আলাদ-দারবি (হাদীসের
ব্যাখ্যা ও তার হুকুম।]
I must thank you for the efforts you've put in penning this blog. I'm hoping to view the same high-grade blog posts by you later on as well.
ReplyDeleteIn fact, your creative writing abilities has inspired me to get my own blog
now ;)
Feel free to visit my web-site - elektronisk cigaret
There is certainly a great deal to learn about this subject.
ReplyDeleteI like all the points you have made.
Here is my homepage - elektronisk cigaret